চমেকে মধ্যরাতে মানবতার সেবায় চবি শিক্ষার্থীরা

রাত দুইটা। এই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে নেমে আসে ভয়ংকরতম নিরবতা। কিন্তু আজকের চিত্র ভিন্ন। চারপাশ থেকে জিরো পয়েন্টে এসে জড়ো হচ্ছেন ক্যাম্পাসের হল, কটেজ ও মেসে অবস্থান করা চবি শিক্ষার্থীরা। সবারই গন্তব্য একই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। উদ্দেশ্য আহতদের প্রয়োজনে রক্তদান ও সহযোগিতা।

এর আগে রাত এগারোটার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে প্রথমে অগ্নিকাণ্ড ও পরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, প্রায় দুই শতাধিক চবি শিক্ষার্থী রাত দেড়টা থেকে ধীরে ধীরে জিরো পয়েন্টে জড়ো হতে থাকে। মেডিকেলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হলেও চলছিল না কোনো গাড়ি। সকলের চোখেমুখে তখন দুশ্চিন্তার ভাব লক্ষ্যণীয়। তাহলে কি হাসপাতালে যাওয়া হবে না তাদের? এমতাবস্থায় চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল রুবেল তার নিজেদের কর্মীদের চমেকে যাওয়ার জন্য দুইটি দ্রুতযান বাসের ব্যবস্থা করেন।

চমেকে মধ্যরাতে মানবতার সেবায় চবি শিক্ষার্থীরা 1

শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়ের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরে গিয়ে নিজেরাই একটি বাস নিয়ে রওনা হন চমেকের উদ্দ্যেশ্য। তবে তিনটি বাসেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ছাড়া বাকিদের যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এমন সময় আবারো দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় চমেকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জিরো পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে অপেক্ষারত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এমতাবস্থায় তাদের আশার আলো হয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে টহলরত পুলিশ ভ্যান। পুলিশ ভ্যানে জায়গা কম হওয়ায় সেখান থেকে শুধু নেগেটিভ রক্তের গ্রুপধারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক নাম্বার গেইটে নামিয়ে দেয় ভ্যানটি। অতঃপর সেখান থেকে তারা ট্রাকে করে রওনা দেন চমেক হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় চট্টগ্রাম খবরের। তারা বলেন, মানবতার ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষার্থীরাই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে। আজও তার বিপরীত হয়নি। আমরা সবাই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজে অংশ নিতে মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।

তারা বলেন, সবার আগে মানুষ ও মানুষের জীবন। মানুষের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে আমাদের দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবে। আর আমরা সে উদ্দেশ্যেই মেডিকেলে রওনা দিয়েছি। আমার রক্তে যদি একজন মানুষের প্রাণ বাঁচে তাহলেতো আমি সৌভাগ্যবান।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পর আমি ও আমার কর্মীরা নিজ জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আহতদের সেবায় এগিয়ে আসতে। এবং প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে মানবার সেবায় এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসা উচিত। এসময় সংকট চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে চমেক হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট বাসের দাবি জানান।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।