‘চারুকলার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ নয়’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইন্সটিটিউটের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছে ভবনসমূহের ঝুঁকিপূর্ণতা ও ব্যবহারের উপযোগিতা যাচাই এবং প্রতিকারের নিমিত্তে গঠিত কমিটি। তবে কিছুকিছু স্থানে পলেস্তারা ও বীমে যে ফাটল পরিলক্ষিত হয়েছে তা মেরামতযোগ্য বলেও কমিটি জানিয়েছে।
বুধবার (১ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উল্লেখিত কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল। তিনি বলেন, চারুকলার ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। পুরাতন হওয়ার কারণে শ্যাওলা জমেছে আর। ছাদে অধিক পরিমাণে গাছের পাতা পড়ার কারণে স্যাঁতসেঁতে হয়েছে। আর দু’এক জায়গায় হালকা ফাটল ধরেছে। এগুলো মেরামতের কাজ চলতেছে।

জানা গেছে, চারুকলা ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভবনের ঝুঁকিপূর্ণতা ও ব্যবহারের উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য গঠিত কমিটি গত ৪ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরে ভবনসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিতিত ছিলেন। পর্যবেক্ষণ শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারী উপাচার্যের দপ্তর বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

প্রতিবেদনে অনুযায়ী, একাডেমিক ভবন ফাউন্ডেশনে ও প্রথম তলায়, দ্বিতীয়তলায় কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়নি। তবে নীচতলার কিছু কক্ষে ফাটল দেখা দিয়েছে, ৩য়তলার কাঠামোগত কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়নি তবে পশ্চিম পার্শ্বের উত্তর দিকের দেয়ালে ড্যাম্প দেখা দিয়েছে, চতুর্থ তলায় কাঠামোগত কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়নি তবে বর্ষাকালে ছাদে পানি জমে থাকার ফলে বিশেষ করে করোনাকালীন বন্ধের সময়ে ঝরা পাতায় পরিপূর্ণ থাকার কারণে কিছু কক্ষে ছাদ ও বীমের পলেস্তারা খসে পড়েছে এবং কিছুকিছু জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ে ফাটল উন্মুক্ত হয়েছে। এবং কিছু কক্ষে জানালার পার্শ্ব দিয়ে দেয়াল চুয়ে পানি পড়ে ফলে কিছুকিছু ওয়াল ড্যাম্প হয়ে গেছে।
এছাড়াও, একাডেমিক ভবনের ছাদে প্রচুর পরিমাণে পাতা জমে থাকার ফলে বর্ষাকালে ছাদে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।

ভাস্কর্য ভবনের শ্রেণীকক্ষের প্রতিটি কক্ষ পরিদর্শন পূর্বক কাঠামোগত কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়নি। ছাদের কিছুকিছু স্থানে আগাছা উঠে গিয়েছে যা অতিদ্রুত পরিস্কার করা প্রয়োজন।

শিল্পী রশীদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারী ভবনের কিছুকিছু আউটার ওয়ালে ড্যাম্প দেখা দিয়েছে। ছাদে ড্রেইনের সিস্টেমের সমস্যা থাকার কারণে গ্যালারী ভবনের কিছুকিছু রুম স্যাঁতস্যাতে হয়ে গেছে।

প্রশাসনিক ভবনের নীচতলা ও দ্বিতীয়তলায় কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হয়নি তবে তৃতীয়তলায় মাস্টার্সের ক্লাস রুমে বাঁমে কিছু ফাটল দেখা গিয়েছে। তাছাড়া ছাত্রছাত্রীদের টয়লেটের ব্যবস্থাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে উক্ত স্থানগুলোতে ড্যাম্পপ্রুফ ক্যামিকেল ব্যবহারের মাধ্যমে পলেস্তারা সম্পূর্ণরুপে নতুনভাবে মেরামত করা সম্ভব। যে সকল ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধানে মেরামতযোগ্য। উক্ত ভবনসমূহ ব্যবহারে কোন ঝুঁকির সম্ভাবনা নাই। একাডেমিক ভবনে পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেট নেই যা সুবিধাজনক স্থানে সন্নিবেশ করা যেতে পারে। সর্বশেষ কমিটি সুপারিশ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধানে ভবনগুলোর মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হলে ভবনে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকগণ সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্তভাবে ভবনগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।

এ বিষয়ে চারুকলা ইন্সটিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের বিষয়ে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, পর্যবেক্ষণ শেষে চারুকলার ভবনগুলা ঝুকিপূর্ণ নয় বলে গঠিত কমিটি জানিয়েছে। ছোট ছোট যে কয়েকটি সমস্যা রয়েছে তা মেরামতের কাজ চলছে। কাজগুলো হয়ে গেলেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারবে।
চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। চারুকলার মতো একটি জায়গাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার মতো সরকারের এই মুহুর্তে ফান্ড নাই। এই মুহুর্তে সেটা সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি চারুকলাকে স্থানানন্তরের বিষয়ে কাজ শুরু করতে বলে এবং সার্বিক দিক বিবেচনা পরিবেশ পরিস্থিতি অনূকূলে থাকে তাহলে সে বিষয়ে আগানো হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২ নভেম্বর চারুকলা ইন্সটিটিউট সংস্কারের ২২ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে তা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মেরামতের কথা বলে গত ২ ফেব্রুয়ারী একমাসের জন্য চারুকলা ইন্সটিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেট। এর পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারী বন্ধের সময়সীমা আরো এক মাস বর্ধিত করেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।