চীনের ভোজসভা থেকেই কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে চীন সফরে গেলেন। আগ থেকে সব আলোচনা ঠিকঠাক থাকলেও কোনো এক অজানা কারণে চীন সরকার কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চায়নি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে দেওয়া ভোজসভায় তিনি বললেন, ‘আপনারাই আমাদের ইনভাইট করেছেন, আমরা এটা (টানেল) চাইনি।’ এরপরই মূলত চীন সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে টানেল নির্মাণে নিজেদের সম্পৃক্ত করে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিয়ে টানেলের বিষয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব। এরপর ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যখন চায়নাতে গেলাম, সব চুক্তিপত্র নিয়ে যেদিন মিটিং হবে সন্ধ্যায়, তার আগের দিন রাতে আমাদের জানানো হলো, চায়নিজ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই প্রজেক্টে তারা সহায়তা দিতে প্রস্তুত নয়। এরপর আমরা রাত ১টা-২টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে অনেক নেগোসিয়েশন করার পর উনারা রাজি হলেন না। পরবর্তীতে ডিনারের সময় প্রধানমন্ত্রী একটা আনকনভেনশনাল ডিপ্লোম্যাটিক আলোচনা তুলে এই টানেলের বিষয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চায়নিজ সরকার আমাদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছে। যদি এভাবে ফিরিয়ে দেয়, তাহলে ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলে বা মানুষের মধ্যে কী ধরনের মনোভাব তৈরি হতে পারে সেটির উল্লেখ করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন, ‘আপনারাই আমাদের ইনভাইট করেছেন, আমরা এটা (টানেল) চাইনি।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই কথা শোনার পর চায়নিজ প্রাইম মিনিস্টার আমাদের ডাকলেন আর সবাইকে ইনস্ট্রাকশন দিলেন। ডাইনিং টেবিলেই চায়নিজ প্রাইম মিনিস্টার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চায়নিজ কমার্স মিনিস্টার, ফাইন্যান্স মিনিস্টার এবং আমরা যখন আলোচনা শুরু করলাম, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় চায়নিজ প্রাইম মিনিস্টার কনভিন্স হলেন।

সচিব খন্দকার আনোয়ার বলেন, ‘তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চায়নিজ প্রাইম মিনিস্টারকে বললেন, ‘আপনার আসার দরকার নেই। আমার স্যুইটে বড় ড্রইংরুম আছে। সেখানে বসে আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলব।’ রাত ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর রুমে বসে চায়নিজ কমার্স মিনিস্টার ও আমরা চুক্তিটা স্বাক্ষর করেছি। আর এখানে আনকনভেনশনাল ডিপ্লোম্যাটিক এফোর্ট না থাকলে এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না।

প্রথমে চায়না সরকার রাজি না হওয়া, তারপর তারা রাজি হওয়া। এরপর চুক্তি প্রস্তুত করতে গিয়ে সচিব আনোয়ারসহ আরও কয়েকজন ডিনার করতে পারেননি। যেটি বঙ্গবন্ধু কন্যার দৃষ্টি এড়ায়নি। তা উল্লেখ করে মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, রাত ১২টায় আমরা যখন চুক্তি স্বাক্ষর করে বের হয়ে যাই, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বললেন, ‘তোমরা কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, ‘স্যার আমাদের তো চুক্তি শেষ। আমরা রুমে চলে যাচ্ছি।’ তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা কোথাও যাবে না। টেবিলে ভাত, সবজি, ডাল, গরুর মাংস আছে; খেয়ে যাও। আমাদের অভুক্ত থাকার বিষয়টি পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি এড়ায়নি। এবং তিনি আমাদের জন্য নিজেই খাবারের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সচিব আনোয়ারের স্মৃতিচারণে উল্লেখিত বিষয়টি আবার তুলে ধরে টানেল নির্মাণে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

চট্টগ্রাম প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, হুইপ শামসুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।