জীবন একটাই-বেঁচে থাকি বন্ধুতায়

মানুষের একটাই জীবন। মানুষ একবারই জন্মগ্রহণ করে, তারপর একদিন চিরতরে হারিয়ে যায় পৃথিবীর আলো-বাতাস থেকে। মানুষের জীবনের নির্দিষ্ট সীমা-পরিসীমা রয়েছে। এর মধ্যেই তাকে বেঁচে থাকতে হয় আনন্দ আর বেদনায়। ক্ষুদ্র এই জীবনে মানুষ আক্ষরিক অর্থেই একা, নিঃসঙ্গ। এভাবে একাকী মানুষের জীবন চলে না, চলতে পারে না। ছাত্রজীবনে তো নয়ই, জীবনে চলতে গেলে সঙ্গী প্রয়োজন। প্রয়োজন বন্ধুর। একজন প্রকৃত বন্ধুই পারে জীবনটাকে বদলে দিতে, দুঃখ-বেদনার জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে। এই জীবনে তাই আমাদের বেঁচে থাকতে হয় বন্ধুতায়।

কিন্তু স্বার্থপর এই পৃথিবীতে প্রশ্ন আসে– বন্ধু কে? কোথায় থাকে? সে কি ছেলে না মেয়ে? সাদা না কালো? ধনী না গরিব? মেধাবী না মেধাহীন? সে কি আমার বন্ধু হওয়ার যোগ্য? সে আমার বয়সে ছোট না বড়? এসব মনোভাব যাদের মধ্যে আছে তাদের জন্য এই বন্ধুত্ব নয়। বন্ধুতায় এসব প্রশ্নের কোনো স্থান নেই। এতসব ভেবে বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধু হওয়ার জন্য একটা সুন্দর মন চাই; যে যেমনই হোক, যে বয়সেরই হোক। বন্ধুত্ব সর্বজনীন প্রেমের, সর্বোচ্চ ত্যাগের।

জীবন একটাই-বেঁচে থাকি বন্ধুতায় 1

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশটির ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তীব্র একাকিত্বে ভুগছেন।

তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমরা বন্ধুতায় না হলেও মানুষ হিসেবে একে অপরের সাথে মিলেমিশে বসবাসের যোগ্যতা আমাদের রয়েছে। আবহমানকাল থেকেই এ দেশের মানুষ নানা প্রেক্ষাপটে মিলেমিশে বসবাস করে আসছেন। তবে আধুনিক সময়ে সেই পরিস্থিতিটুকু বদলে যাচ্ছে দ্রুতই। তাই বন্ধুত্ব কিভাবে করবেন-তা নিয়ে কিছু টিপস আপনার জন্য তুলে ধরা হলো।

ক্লাব বা সংগঠনে যোগ দিন:
কোনো একটি দল, সংগঠন বা পছন্দের কােনা বিষয়ের ওপর ক্লাসভিত্তিক কোর্সে যোগদানের মাধ্যমে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই হয়তো পেয়ে যেতে পারেন আপনার প্রিয় বন্ধুকে। একসঙ্গে থাকার কারণে আপনার সহকর্মী বা সহপাঠীরা জানতে পারবেন আপনার কিসের প্রতি উৎসাহ রয়েছে। এতে তৈরি হবে নতুন বন্ধুত্ব।

স্বেচ্ছাসেবক হয়ে উঠুন :
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা মানে, মানুষের প্রতি আপনার মমত্ববোধ আছে। মানুষের প্রতি এই মমত্ববোধ থেকে তৈরি হবে নতুন বন্ধুত্ব এখন এই সেবা আপনার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি হোক বা আরও বড় পরিসরে সেটা বিষয় না। বিষয়টি হল, এই কাজের মাধ্যমে আপনার নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে এবং এই মানুষগুলো তারাই হবে যাদের মন উদার।

যোগাযোগ তৈরি করুন:
কোন বিয়ের পার্টিতে বা জিমে অথবা খেলতে গিয়ে যদি নতুন কারও সঙ্গে আপনার পরিচয় হয় যার সঙ্গে কিনা আপনি মিল পাচ্ছেন তাহলে তার ফোন নম্বর বা ইমেইল ঠিকানাটি চেয়ে নিন। কারণ তার সঙ্গে আপনার আবার দেখা হবে কিনা সেটার নিশ্চয়তা নেই। এজন্য তার সঙ্গে যোগাযোগের একটা মাধ্যম বের করা জরুরি। আপনি তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরের দিন একটি লাইন লিখে জানান যে তার সঙ্গে সময় কাটানোটা আপনি উপভোগ করেছেন। এরপর তাকে কোথাও খেতে যাওয়ার জন্য অথবা কোথাও ঘুরতে বা হাঁটতে যাওয়ার জন্য ডাকতে পারেন। নিজ থেকে এই একটা পদক্ষেপের কারণেই হয়তো আপনি পেয়ে যেতে পারেন প্রিয় একজন বন্ধুকে।

হ্যাঁ বলতে শিখুন:
যদি নতুন পরিচিত কেউ আপনাকে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান বা আপনাকে সিনেমা দেখার টিকিট অফার করে তাহলে হ্যাঁ বলুন। এতে আপনি সাময়িক স্নায়ুচাপের মুখে পড়তে পারেন হয়তো। মনে হতে পারে যে আপনি আপনার গণ্ডির বাইরে গিয়ে কিছু করছেন। কিন্তু জেনে রাখবেন, সাহস না রাখলে, কিছুই অর্জন করা যায়না।
যদি আপনি সত্যিকার অর্থে সেই সাহস যোগাতে না পারেন, অথবা সে আপনাকে যেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে সেটা আপনার ঠিক পছন্দ না, তাহলে আপনি তাকে ভদ্রভাবে না বলুন। তবে সেই না বলার মধ্যে এটাও পরিষ্কারভাবে বলুন যে ভবিষ্যতে সে যদি আপনাকে আমন্ত্রণ জানান তাহলে আপনি সেটা সাদরে গ্রহণ করবেন।

সহকর্মীদের বন্ধু বানান:
বর্তমান ব্যস্ত সমাজে পরিবারের চাইতে আমাদের বেশি সময় কাটানো হয় কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে। তাই এই সহকর্মীদের বন্ধু বানানোর চেষ্টা করা যৌক্তিক। এটা ঠিক যে অফিসের অনেক কথায় আপনি হয়তো কষ্ট পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি বিশ্বস্ত কোনো সহকর্মীর কাছে নিজেকে একটু প্রকাশ করতে পারেন। হয়তো সেও আপনাকে এর প্রতিদানে হয়তো ভাল কিছু দেবে। কাজের পর কোথাও খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা-গুলোয় যোগ দিন। এমনকি আপনি ক্লান্ত হলেও হ্যাঁ বলুন। অথবা লাঞ্চ বিরতিতে আপনি কলিগদের কাউকে নিয়ে স্থানীয় স্যান্ডউইচ দোকানে যেতে পারেন।

কৌতূহলী হোন:
আপনি যদি লাজুক স্বভাবের হন বা কিছু বলতে গিয়ে আটকে যান, তাহলে সেই জড়তা কাটিয়ে ওঠার সহজ উপায় হল অপর পাশের মানুষের বিষয়ে জানতে চাওয়া। কেননা অধিকাংশ মানুষই নিজের বিষয়ে কথা বলাটা উপভোগ করে। আপনি যদি ভাল শ্রোতা হন এবং ভবিষ্যতে তার সেই বিষয়গুলো টেনে আনেন। তাহলে বুঝে নিন যে আপনি খুব দ্রুত বন্ধু পেতে যাচ্ছেন।

সব শেষে বলি, একজন নতুন বন্ধুর প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যে সতেরো বছরের হতে পারে আবার সত্তরও হতে পারে, তার বেড়াল পছন্দ হতে পারে আবার শুধু কুকুর পছন্দ হতে পারে। তার পছন্দের গান হতে পারে মেটাল বা ক্লাসিক্যাল। মনে রাখবেন যে, ভিন্ন ব্যক্তিত্ব আমাদের আকর্ষণ করে বেশি। তাই প্রথম দেখাতেই কাউকে বিচার করা ঠিক হবেনা – প্রত্যেকেই একটা সুযোগ দিন। সেইসব মানুষদের কথা ভাবুন যাদের আপনি প্রথম দেখায় ভীষণ বিরক্তিকর ভেবেছিলেন, অথচ যারা এখন কিনা আপনার ভীষণ প্রিয়। এভাবেই প্রতিদিন নতুন নতুন বন্ধুত্ব তৈরি করুন আর বন্ধুতায় বেঁচে থাকুন-সুস্থতায়। হোক আপনার দীর্ঘজীবন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।