টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের আসামি ছেড়ে দিয়ে লাখ টাকায় মিমাংসার প্রস্তাব!

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ১৬ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তকে ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে। তিনি আবার ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাখ টাকার সমঝোতার প্রস্তাবও দিয়েছেন ভিকটিমের পরিবারকে। তারা তাতে রাজি না হয়ে ৪ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ভিকটিমের বড় ভাই চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, সোমবার (২০ মার্চ) চাতরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে আমরা মৌখিক অভিযোগ করেছি। ঘটনার পরদিন ১৬ মার্চ আমরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে ১৭ মার্চ রাতে পুলিশ চাতরী ইউনিয়নের সিংহরা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ধনঞ্জয় বিশ্বাস ভোলাকে দিয়ে ধর্ষকদের সঙ্গে এক লাখ টাকায় সমঝোতার চেষ্টা করেন। এসময় ইউপি সদস্যের সঙ্গে আরও কয়েকজন লোক আসে। আমরা সমঝোতা না করলে পুলিশ আমার বোনকে থানায় নিয়ে সারারাত বসিয়ে রাখে। পরে রকি, পলাশ, চন্দন ও শিপংকর নামে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরো একটি মামলা দায়ের করান আমাদের দিয়ে।

তিনি আরও বলেন, রোববার সকালে আমার বোনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে আমার বোন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছে।

ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, গত বুধবার (১৫ র্মাচ) দুপুরে চাকরি থেকে সিএনজি যোগে এক ছেলের সঙ্গে পারকি সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যায় ভিকটিম। সেখান থেকে সন্ধ্যায় চাতরী ইউনয়িনরে পূর্ব সিংহরা ইছামতি কলা বাগান এলাকায় যায়। সেখানে ৪জন যুবক তাকে জোরর্পূবক ধর্ষণ করে। এসময় পুলশিরে উপস্থিতি টের পেয়ে সবাই পালিয়ে গেলেও সিএনজিসহ আটকে পড়েন রকি (২০)। এসময় পুলিশ ফারুক তার বোনসহ আটক রকিকে কালাবিবি দীঘির মোড় এলাকায় নিয়ে আসে। সেখানে একটা ফার্মেসী থেকে একটা ওষুধ এনে দেন এবং আমার বোনকে ওষুধটি খাওয়ায়। প্রায় দুইঘন্টা পর আটককৃত রকিকে ১৮ হাজার টাকা বিনিময়ে ছেড়ে দেন এবং আমার বোনকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।

বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি সদস্য ধনঞ্জয় বিশ্বাস ভোলা বলেন, ধর্ষণের ঘটনাটরি জন্য পুলিশের পরামর্শে সমঝোতার একটি বৈঠক করা হয় ভিকটিমের ভাড়া বাসাতে। বৈঠকে স্থানীয় সাহাবুদ্দিন ও জাবেদ নামে আরো দুইজন ছিল। এসময় প্রথমে ২৫ হাজার টাকা ও পরে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা তা মানেনি।

পুলিশ সদস্য ওমর ফারুককে টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে অভিযুক্ত আসামী রকির পিতা বিধান দত্ত বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে আমি নিজ হাতে এএসআই ওমর ফারুককে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনি।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা থানা পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না। আপনি ওসি স্যার ও তদন্ত স্যারের সঙ্গে কথা বলেন বলে ফোন কেটে দেন।

জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত র্কমর্কতা (ওসি) মীর্জা মুহাম্মদ হাছান বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। এঘটনায় যদি কোনো পুলিশের সদস্যের কোনো গাফলি থাকে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল জানান, আমার ইউনিয়নে এরকম ঘটনা কখনও ঘটেনি। সোমবার সন্ধ্যায় ভিকটিমের ভাই ঘটনা ও সমঝোতার বিষয়টি আমাকে জানানোর পর দ্রুত আমি ওসি সাহেবকে জানাই এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের অনুরোধ জানিয়েছি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।