দুই সন্তানের জনক—অবিবাহিত যুবক পরিচয়ে অর্ধ শতাধিক তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল!

সৌদিআরব প্রবাসী জহির উদ্দিন (৩২) দুই সন্তানের জনক। গত ৫ মাস আগে দেশে এসেছেন ছুটিতে। ছুটিতে এসে কক্সবাজারে এক এনজিও কর্মীকে বিয়ের প্রস্তাবে দেখা করেন। দেখা করতে গিয়ে এনজিও কর্মীর মোবাইল থেকে নিজের বাপ-মাকে দেখানোর কথা বলে কিছু ছবি নেন। সাথে ওই তরুণীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবিও নিয়ে নেন জহির।
এরপর ওই রাতেই ভিকটিম তরুণীকে ভিডিও কল করেন। তরুণী সাড়া দেওয়ার পর প্রকাশ পায় জহিরের আসল চেহারা। জহির সেই তরুণীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেন। তরুণী রাজি না হলে তার মোবাইল থেকে দুপুরে সরিয়ে নেওয়া ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ভাইরালের হুমকি দেন।
নিজের একান্ত ছবি হাতছাড়া হওয়ায় ভয়ে তরুণী জহিরের কথায় সায় দেন। কিন্তু জহির পেতে রাখেন আরেক ফাঁদ—ভিডিও রেকর্ড করা। ব্যক্তিগত ছবি ভাইরালের ভয়ে এবার সেই তরুণী শিকারে পরিণত হন ভিডিও ভাইরালের। জহির তার আরেক সহযোগী সরোয়ারের সহয়তায় ভিডিও কলের দৃশ্য রেকর্ড করে তৈরি করেন ভিডিও। সেই ভিডিও সরোয়ারের মাধ্যমে জহির পাঠান ভিকটিম তরুণীর মোবাইলে। মোটা অংকের টাকা দাবি করে হুমকি দেন প্রস্তাব দেন কক্সবাজারে হোটেলে রাত কাটানোর! তরুণী রাজি না হওয়ায় সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার পাশাপাশি তার অফিস বস এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছেও পাঠানোর হুমকিও দেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় র‌্যাব-০৭এর চান্দগাঁওস্থ মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই জানিয়েছে র‌্যাবের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. রেজওয়ানুর রহমান। এসময় র‌্যাব-০৭এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

মেজর মো. রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ভিকটিম তরুণী একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে উচ্চ বেতনে একটি এনজিওতে কক্সবাজারে চাকরি করছেন। তার পরিবারও তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র খুঁজছেন। অপর দিকে ‘সাইবার অপরাধী’ জহির নিজেকে সেনাবাহিনীর ননকমিশন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিয়ের আলাপ করে। এতে আগ্রহী হয়ে সেই তরুণী জহিরের সাথে দেখা করেন। কিন্তু কয়েক ঘন্টায় তার জীবনের নেমে আসে একটি কালো ছায়া। তিনি নিস্তার পেতে র‌্যাবের স্মরণাপন্ন হন। আমরা তদন্তে সত্যতা পেয়ে জহিরকে গ্রেপ্তার করি। সাথে তার সহযোগী সরোয়ারকেও।

তিনি আরও বলেন, জহিরকে গ্রেপ্তার করে দেখি তার অপরাধের তালিকা আরও লম্বা। জহির তার সব ধরণের নিকটাত্মীয়কে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়েছে। যুবতীদের পাশাপাশি তার দাদীর বয়সী নারীও তার শিকারে পরিণত হয়েছেন।

র‌্যাব-০৭এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার জানান, জহিরের মুঠোফোন তল্লাশী করে অসংখ্য তরুণীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি, ভিডিও পাওয়া গেছে, যাদের কাছ থেকে সে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা তাদের নিকটাত্মীয়দের কাছেও ছড়িয়ে দিয়েছে।

জহির কক্সবাজার জেলার পেকুয়া রাজাখালীর আমিনুল হকের ছেলে। তার সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। তার সহযোগী সরোয়ার পেকুয়া মিয়ারপাড়ার শওকতের ছেলে। পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তাদেরকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানায় র‌্যাব।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।