দৃশ্যমান কক্সবাজারের রেলপথ

অবশেষে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রেলে চড়ে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। যা এখন আর স্বপ্ন নয়, ইতোমধ্যে ২৫ কিলোমিটার রেললাইন এখন দৃশ্যমান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন পর্যন্ত মাটি ভরাট, ব্রিজ ও পাস নির্মাণ, রেলস্টেশন তৈরিসহ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে চেষ্টা করছেন তারা। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে ট্রেন। তখন কক্সবাজারের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। কক্সবাজারে পর্যটনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ঘটবে বিপ্লব।

কাজ শেষ হতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। এ জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ানোর এই প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

জানা যায়, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১০২ রুট কিলোমিটার। এরমধ্যে কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, হারবাং এবং রামু এলাকায় ২৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। বাকি ৭৭ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনে কাজ চলছে। চলছে সিগনেলিং তার টানার কাজও। এছাড়া এখন পর্যন্ত মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে মেজর ও মাইনর ব্রিজ এবং কালভার্টগুলোর।

স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ স্থাপন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কটি উদ্বোধন করেই ফেলে রেখেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বাস্তবায়ন করেছে সীমান্তের অধিবাসী এবং ব্যবসায়ীদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সংযোগ স্থাপনের এই মৈত্রী সড়ক। ঠিক তদ্রুপ জেলাবাসীর স্বপ্ন কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনও বাস্তবায়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে পারেনি। যা শেখ হাসিনার সরকার দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে নতুন যুগের সূচনা হবে রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থায়। পদ্মা সেতুর মতো ক্ষমতাসীন সরকারের উন্নয়নের সাফল্যের তালিকায় কক্সবাজারে রেললাইন একটি বৈপ্লবিক সংযোজন।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মফিজুর রহমান বলেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে। তবে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হবে না। কিছু কাজ বাকি থাকবে। গাছ লাগানো ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ বাকি থাকবে।

তিনি বলেন, করোনার ধাক্কা, ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা, বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোতে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিলো। তবে চলতি বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। তবে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারবো। এরপর এই রেলপথে ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু হবে। কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তা ঠিক করা হবে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা কাজ করছি। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।

উল্লেখ্য, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত সন্নিকটে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি গত ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের রেলপথের এই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রায় একযুগ পেরিয়ে গেলেও করোনা, লকডাউন, জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পটির অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। প্রকল্পটি এডিবির অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।