নগরের বাহিরেও মেট্রোরেল সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিতে হবে- তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের উন্নয়ন তিনি নিজ কাঁধে নিয়েছেন ,এবারো তিনি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার ঘোষণা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম নগরের পরিবহন মাস্টার প্ল্যানসহ মেট্রোরেলের সমীক্ষার জন্য প্রিলিমিনারি সার্ভে কাজ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা ও প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে ৮৫ লাখ, চট্টগ্রাম সিটিতে ৭০ লাখ মানুষ বসবাস করে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের লোক দ্বিগুণ হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বে টার্মিনাল হতে যাচ্ছে। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতার পর চট্টগ্রামই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর। সারা দেশে ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ চলছে। দেশ শিল্প উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছে। শিল্প খাতে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল যেতে পারে। যেহেতু সেখানে শাটল চলাচল করে। এ ছাড়াও নদীর ওপারে কীভাবে মেট্রোরেল নিয়ে যাওয়া যায় এসব বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা উচিত।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আলাদা বসার পরিকল্পনা হয়েছে। রেলওয়ে, ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সবার সঙ্গে আলাদা বসার পর একটি পরিকল্পনা নিতে হবে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে।

অতীতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকালে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ ছিল,জায়গা নির্বাচনেও দেখা গেছে সমন্বয়হীনতা। এটি বন্দরের জায়গা, কাউকে দেওয়া যাবে না। এটি রেলওয়ের জায়গা, সিটি করপোরেশনের জায়গা এ জায়গা আমাদের, এখানে আমাদের প্রকল্প রয়েছে। এটি দেওয়া যাবে না। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল মালেক বলেন, কাজ করতে গেলে সমস্যা আসবে। সেটি চিহ্নিত করে সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এখানে যদি কোনো বিচ্যুতি ঘটে তাহলে সেটি আমাদের জন্য দুঃখজনক হবে। কারণে এখানে যারা আছেন সবাই খুবই অভিজ্ঞ। প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার পর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে। জনগণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কী চায় তার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী ধাপে যেতে পারবো। এখানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম একটি সৌন্দর্যপূর্ণ শহর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের প্রয়োজন রয়েছে। উন্নয়ন করতে হলে আমাদের ভোগান্তি পোহাতেই হবে। জনভোগান্তি যাতে কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপরিকল্পিত ভাবে পাহাড় কেটে যেভাবে ন্যাড়া করা হচ্ছে, ভূ-প্রকৃতির যে সৌন্দর্য সেটি আমরা একেবারেই ধ্বংস করে ফেলছি। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ৭ ফুট ভরাট হয়ে গেছে। কর্ণফুলী নদী আগামী ৫০ বছরে টিকে থাকবে কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে। কর্ণফুলী নদী না টিকলে বন্দরও টিকবে না। ১০০ বছরের পুরোনো বন্দর এটি। এটা রক্ষা করতে হলে কর্ণফুলী নদীকে আগে রক্ষা করতে হবে। যার জমিই হোক এটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করতে দিতে হবে। আন্ডারগ্রাউন্ডলি মেট্রোরেল নিয়ে যেতে হবে। মূল শহর দিয়ে মেট্রোরেল নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। সমন্বয়হীনতা আমাদের উন্নয়নের প্রধান বাধা। সবাই মিলেই পরিকল্পনাটা নিতে হবে। ঠিকভাবে পা রাখলে আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে না। সব সংস্থা মিলে এক যোগে কাজ করতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ না করে সুন্দরভাবে সমন্বয় করে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিয়ে দায় সারলে হবে না। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। মেট্রোরেল নগরে বাস্তবায়ন হওয়ার পরে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নিতে হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে হবে।

সভায় মেট্রোরেল বাস্তবায়নে যেন সমন্বয়হীনতা না হয় তার ওপর জোর দিয়েছেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে আরো মতামত দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

সভায় মতামত প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ।
উপস্থিত ছিলেন কোরিয়ার ফার্স্ট সেক্রেটারি জেং ইউল লি, প্রফেসর ইলজন চ্যাং, কোইকা’র প্রতিনিধি চ্যাউন কিম, জিং বো চুই, মো জেন কং, চট্টগ্রাম কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’র চেয়ারম্যান মি. জিনহুক পাইক।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।