নগর বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব গড়ালো মারামারিতে

চট্টগ্রাম নগর বিএনপিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ অনেক পুরোনো। জ্যেষ্ঠ, ত্যাগী নেতারা নগর বিএনপিতে মূল্যায়নের পরিবর্তে নিজের লোক দ্বারা মঞ্চ বেষ্টিত রাখার অভিযোগও আছে নগর নেতাদের বিরুদ্ধে। সেই ক্ষোভে পরপর তিন নেতা বক্তব্য না দেওয়া এবং তারই সূত্রধরে প্রতিবাদ সভায় মারামারিতে রক্তাক্ত হলেন বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। আর সেই সমাবেশে নিজেরাই জড়িয়ে পড়েন মারামারিতে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা মারামারির জন্য ‘চ্যাংড়া পোলারা স্টেজে’— এমন মন্তব্য করেন এবং যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশাকে সরাসরি দায়ী করে দলের ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার আহ্বান জানান।

নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন গন্ডগোলের বিষয়টি স্বীকার করে এটাকে ভুল বোঝাবুঝি এবং সামান্য ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, বক্তব্য দেওয়া নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি থেকে সামান্য উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা সেটা মিনিমাইজ করে প্রোগ্রাম শেষ করেছি।

নগর বিএনপি নেতা ও মোহরা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আযম বলেন, কামরুল ইসলাম বক্তব্য দেওয়ার জন্য অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তারের নাম ঘোষণা করার পর তিনি বক্তব্য দিতে চাননি। বক্কর তাকে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করলে নাজিমুর রহমান তাকে বক্তব্য দিতে নিষেধ করেন। তখনই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার নগর বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি নগর ছাত্রদলের শীর্ষ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। নাজিমুর রহমান নগর ছাত্রদলের এক সময়ের সভাপতি। অ্যাডভোকেট সাত্তার ও নাজিমুর রহমান নগর বিএনপির চলমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার বলেন, প্রোগ্রামের মঞ্চে আমাদের ডাকা হয়নি। মঞ্চ দখলে ছিল আমার ছেলের বয়সীদের। আমি, নাজিমুর রহমান, সৈয়দ আজম উদ্দিন, কাজী বেলাল দর্শক সারিতে বসতে হয়েছে। আমার আগে আযম, নাজিমুর, বেলালদের নাম ঘোষণা হলেও তারা বক্তব্য দেয়নি। কামরুলের ঘোষণায় আমি যখন বক্তব্য দিতে যাচ্ছিলাম না তখন বক্কর বারবার অনুরোধ করায় আমি বক্তব্য দিতে উঠছিলাম। তখন নাজিমুর সিনিয়রিটির বিষয়টি তুললো। তখনই গণ্ডগোল লাগলো।

এ বিষয়ে নাজিমুর রহমান বলেন, দলের আহ্বায়ক-সদস্য সচিব সংগঠনের গঠনতন্ত্র না মেনে নিজেদের ইচ্ছে মতো দল চালাচ্ছেন। আমরা এসব নিয়ে কথা বলি। সেজন্য আজকের পরিস্থিতি হয়েছে। যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা তেড়ে আমার দিকে এসেছে। এসময় সে চেয়ার ছুঁড়ে মেরেছে। এরপরই মূলত গণ্ডগোল শুরু হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

নাজিমুর রহমানের ওপর হামলায় যার নাম আসছে সেই এমদাদুল হক বাদশা অভিযোগের বিষয়ে বলেন, সাত্তার ভাই বক্তব্য দেওয়ার সময় নাজিমুর রহমান ভাই হট্টগোল শুরু করেছেন। আমি নাজিমুর রহমান ভাইকে নিবৃত করার চেষ্টা করেছি, হামলা নয়। ওই হট্টগোলে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে।

সমাবেশে উপস্থিত থাকা নগর বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, অ্যাডভোকেট সাত্তার, নাজিমুর রহমানদের ছেলের বয়সী ‘চ্যাংড়া পোলারা’ যখন স্টেজে অবস্থান নেয় তখন আমরা আর রাজনীতি নিয়ে কথা বলার আগ্রহ পাই না। আজকের ঘটনাও সেটাই ঘটেছে। দলে দীর্ঘদিন ত্যাগী, জ্যেষ্ঠ নেতারা মূল্যায়ন না পাওয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সামনের দিনে যদি জ্যেষ্ঠ নেতারা মূল্যায়ন না পান তখন কী হয় সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।