প্রেমের বিয়ে, বউকে আনতে গিয়ে গণপিটুনিতে আহত যুবকের মৃত্যু

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় গণধোলাইয়ের শিকার হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরাফাত হোসেন ইমন (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত ইমন পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের পাইরুল গ্রামের এমদাদ হোসেন খোকনের  ছেলে। প্রেম ও গোপনে বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এমনটা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত সহকারী উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দিন মজুমদার জানান, গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়ায় ইউনিয়নের ছত্তারহাট এলাকায় গণধোলাইয়ে শিকার হয়ে আহত হন আরাফাত হোসেন ইমন। আহতাবস্থায় চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহতের খালা কুলসুমা বলেন, পটিয়া আশিয়া ইউনিয়নের আরজু নামে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। গত তিন মাস আগে গোপনে বিয়ে করেন। গত সপ্তাহে মেয়েটি তার বাপের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়িতে চলে আসে। এরপর তার পরিবারের লোকেরা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেন। পরে মেয়ের মা-সহ পরিবারের সদস্যরা এসে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাটানি করে। কিন্তু মেয়েটি তার বাপের বাড়িতে ফিরে যেতে চায়নি। সে বলেছিল বাপের বাড়িতে  গেলে তাকে ওরা মেরে ফেলতে পারে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যরা এসে মেয়েকে তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়।

তিনি আরও বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আনোয়ারা উপজেলার কানুশাহ মাজার এলাকায় ইমনকে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। ঘটনাটি সকালে ঘটলেও আমরা বিষয়টি জানতাম না। এ খবর যখন পেয়েছি তখন প্রায় রাত ১০টা। পরে তার আব্বু চট্টগ্রাম মেডিকেলে খোঁজ করতে গিয়ে  ছেলের সন্ধান পান। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয়রা জানান, সেদিন সিএনজিযোগে কানুশাহ মাজারে আসেন ১০-১২ জন। সেখানে মাইকে ডাকাত-ডাকাত বলে তাদেরকে ধাওয়া করেন স্থানীয়রা। ভিড়ের মধ্যে একজন ছুরিকাঘাতে আহত হন। পরে ছত্তারহাট মোড়ে স্থানীয়রা আবার তাদের মারধর করেন।

আনোয়ারা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শাহেদ হোসাইন বলেন, “পরৈকোড়া ইউনিয়নে কানুশাহ মাজার এলাকায় গণধোলাইয়ে যুবক আহতের খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলো। কিন্তু ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবক মারা গেছে বলে আমরা শুনেছি। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি।”

পটিয়া জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজ বলেন, “আনোয়ারায় গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার আমার ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা যুবক আজ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন।”

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, “আনোয়ারায় মারধরের একটি ঘটনায় পটিয়ার যুবক নিহতের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। মরদেহ মর্গে রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।