বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা—আস্থার নাম ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ

ব্রিটিশ ভারত থেকে পাকিস্তান আমল তারপর স্বাধীন বাংলাদেশ—ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের প্রায় ৮০ বছরের লম্বা জীবনের সিংহভাগ কেটেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে। মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন। বঙ্গবন্ধু যেমন ‘৭০ এর নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিলেন এরপরে শেখ হাসিনারও আস্থার ঠিকানায় পরিণত হোন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
তাইতো টানা ৭ বার সংসদ সদস্য, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব সফলভাবে পালন করে আজ তিনি চট্টগ্রামে হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনার ঢাল। দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এবার এক নম্বর প্রেসিডিয়াম সদস্য।

ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ১৯৪৩ সালের ১২ জানুয়ারি সবুজেঘেরা চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ধুম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তারপর মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পাড়ি জমান লাহোরে।
সেখানে তিনি নিজেকে জড়ান ৬ দফা আন্দোলনের সাথে, দায়িত্ব পালন করেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র পরিষদের সভাপতি হিসেবে। তারপর লাহোর থেকে দেশে ফিরে চট্টল শার্দুল এম.এ. আজিজের হাত ধরে সরাসরি সম্পৃক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে। আর পিছপা হননি আওয়ামী লীগের এই নিবেদিত প্রাণ। রাজনীতির সাথে জড়িয়ে গেলেও দেখা মিলেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে। তবে মোশাররফ খুব করে চাইতেন বঙ্গবন্ধুর কথা শুনতে, তার সান্নিধ্য পেতে। আর সেই সুযোগ হয় ১৯৬৯ সালে।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু কক্সবাজার সফরে গেলেন। তাঁর সফর ব্যয় বহনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ আমাদের হোটেলে গেলেন চাঁদা তুলতে। নেতৃবৃন্দের হাতে চাঁদা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-বঙ্গবন্ধু ডিনার কোথায় করবেন? উনারা বললেন, তা ঠিক হয়নি। আমার হোটেলের লনে বঙ্গবন্ধুকে একটা নাগরিক সংবর্ধনা দেয়ার জন্য আমি নেতৃবৃন্দকে প্রস্তাব দিলাম। তাঁরা রাজি হলেন। সকল শ্রেণি পেশার লোকদের দাওয়াত দিতে বললাম। বঙ্গবন্ধু ও এ নাগরিক সংবর্ধনায় আসতে সম্মতি জানালেন। আমি নাগরিক সংবর্ধনা উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্য বিশেষ একটি ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন করি।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেদিন বঙ্গবন্ধুর পাশে বসার। আমি বঙ্গবন্ধুর পাশে বসেই ডিনারসহ যাবতীয় অনুষ্ঠান উপভোগ করি। আলাপচারিতার এক ফাঁকে বঙ্গবন্ধু আমাকে বিশেষভাবে তৈরি ক্যান্ডেল লাইট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কি বাজারে পাওয়া যায়? আমি বললাম, না। এটি আমি আপনার জন্য বিশেষ উপায়ে তৈরি করেছি। উনি খুব খুশি হলেন। নৈশভোজ শেষে তিনি আমাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলেন এবং এ আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। আমি বঙ্গবন্ধুকে আমার হোটেলের সম্প্রসারিত কক্ষগুলো ঘুরে দেখালাম।

বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা—আস্থার নাম ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ 1

বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়ে আর ফিরে তাকাননি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এস রহমানের সন্তান মোশাররফ হোসেন ১৯৭০ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে নির্বাচিত হন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। এরপর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বুদ্ধিমত্তা ও বীরত্বের সাথে লড়াইয়ের পর স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধী দলীয় হুইপের এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সাথে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। তার দায়িত্বকালেই এই মন্ত্রণালয়ের বড় বড় প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা—আস্থার নাম ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ 2

২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রাম আওয়ামী পরিবারের অভিভাবক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নিজ হাতে গুছিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলাকে। তাঁর হাত ধরে রাজনীতে আসা কর্মীরা এখন মাঠ সামলাচ্ছেন। আর দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মাঝে তাঁকে সবার ওপরে স্থান দিয়ে আস্থা দেখানোর পাশাপাশি সম্মান করা হয়েছে তাঁর বর্নাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।