বাবুল আক্তারের রিমান্ডে আদালতের না, আইনজীবীরা বললেন একান্তে কথা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে খুলশী থানায় দায়ের করা এসপি নাইমা সুলতানার মামলা সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের করা ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বিপরীতে বাবুলের সাথে একান্তে কথা বলতে আইনজীবীদের করা আবেদন মঞ্জুরে করে তার সাথে আইনজীবীদের কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন।
রোববার (২২ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আব্দুল হালিমের আদালতে পুলিশের রিমান্ড ও আইনজীবীদের কথা বলার আবেদনের শুনানি হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করেছেন। আর আমরা সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের সাথে একান্তে এক ঘন্টা কথা বলার অনুমতি প্রার্থনা করেছিলাম। মাননীয় আদালত আমাদের সাথে বাবুল আক্তারের আলাপের সুযোগ দিয়েছেন।

গত ১৬ অক্টোবর স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের আসামি বাবুল আক্তার ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনসহ চারজনের বিরুদ্ধে নগরীর খুলশী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা। মামলায় বাবুল আক্তারের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ ও ভাই হাবিবুর রহমান লাবুকেও আসামি করা হয়।
প্রবাসী ইলিয়াস বাবুলের স্ত্রী মিতু হত্যার তদন্ত নিয়ে পিবিআই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইউটিউবে ভিডিও প্রচার করেছিলেন। এ ঘটনায় একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঢাকার ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার। বাবুল আক্তারকে আদালতের নির্দেশে ওই মামলায়ও ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, বাবুল আক্তার, তার ভাই ও বাবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াছ হোসাইন বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় গত ৩ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে ‘স্ত্রী খুন, স্বামী জেলে: খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে ৪২মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন। ওই ভিডিওতে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে তদন্তাধীন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে প্রচার করা হয়।
স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআই ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু। এদের মধ্যে মুছা ও কালু পলাতক।

অভিযোগপত্রে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই বলেছে, ‘পরকীয়ার ঘটনা জেনে যাওয়ায়’ সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তার ‘সোর্সদের দিয়ে’ স্ত্রী মিতুকে ‘খুন করান’ বলে উঠে এসেছে তাদের অনুসন্ধানে। ২০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে মোট সাক্ষী করা হয়েছে ৯৭ জনকে। তাদের পাঁচজন এ মামলার বর্তমান ও সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মাহমুদা খানম মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। পিবিআইয়ের তদন্তে বাদী বাবুল আক্তারই স্ত্রী হত্যার আসামি হয়ে এখন কারাগারে আছেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।