বাল্কহেড ফুটো করে ডুবিয়ে রেখেছিল পাপ্পী! চুরি করেছে ইঞ্জিনসহ দামী যন্ত্রাংশ

ভাড়া চুক্তি করে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ড্রেজার, বাল্কহেডসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম আত্মসাত করতে ব্যর্থ হয়ে বাল্কহেড ফুটো করে নদীতে ডুবিয়ে রেখেছিল বোয়ালখালী থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনছুর আলম পাপ্পী। আদালতের আদেশে তা উদ্ধার করে ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমানকে বুঝিয়ে দিতে গেলে তিনি দেখেন ইঞ্জিনসহ দামী যন্ত্রপাতি আগেই খুলে নিয়েছে পাপ্পী। তিনি ক্ষতিপূরণে আদালতের ধারস্থ হবেন বলে জানান চট্টগ্রাম খবরকে।

জানতে চাইলে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাতে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, আদালতের আদেশ পেয়ে আমরা ক্যাপ্টেন হাফিজ সাহেবের মালামাল উদ্ধার করেছি। আদালতের আদেশে উদ্ধারকৃত ড্রেজার, বাল্কহেড মালিকপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে এসব যন্ত্রপাতি তো পানিতে ভেসে থাকার কথা। কিন্তু আমরা মামলা তদন্ত ভার নেওয়ার পর বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যে পানির নিছে লুকিয়ে রাখা অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছি। আমরা তদন্তে যা পেয়েছি তা আদালতে জমা দিয়েছি।

ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমান বলেন, দুটি বাল্কহেড ফুটো করে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল। বাল্কহেড দুটির ইঞ্জিন, দুটি আনলোড ড্রেজার এবং একটি লোডিং ড্রেজারের ইঞ্জিনের যাবতীয় যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে অচল করে দেওয়া হয়েছে। সোজা কথা, আমার পাঁচটি ইকুইপমেন্ট এখন কোনো কাজে লাগবে না। আমি আইনি প্রতিকার চাইবো।

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মেরিন কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, একই বিষয়ে এক সাথে দুটি মামলা করার সুযোগ নেই। পুলিশের প্রতিবেদনে সব উঠে এসেছে। আমি আশা করি আদালতে প্রতিকার পাবো।

ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমানের মামলার প্রেক্ষিতে গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের আদালত পাপ্পীকে গ্রেপ্তার এবং পিএসপি মেরিন সার্ভিসেসের মালামাল উদ্ধারের আদেশ দিয়েছিলেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পিএসপি মেরিন সার্ভিসেসের স্বত্বাধিকারী ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমান গত বছরের ১২ আগস্ট আমরিন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মনছুর আলম পাপ্পীর সঙ্গে দুই বছরের জন্য বালি উত্তোলনের সরঞ্জাম ভাড়ার চুক্তি করেন। পাপ্পী ক্যাপ্টেন হাফিজুর রহমানের প্রতিষ্ঠান থেকে সরঞ্জাম ভাড়া নিয়ে বিপরীতে কোনো ভাড়া প্রদান করেননি। নিজের পাওনা চাইতে গেলে পাপ্পী তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন।

মামলার বাদি অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমান বলেন, পিএসপি মেরিন সার্ভিসেসের এমবি আফিয়া ইবনাত ও এমবি বন্নি (১২ ইঞ্চি আনলোডিং এবং লোডিং ড্রেজার) এম.বি ওয়াস্তাবির-২ ও এমবি নিলয় ফায়াজ নামে দুটি বাল্কহেড ড্রেজারসহ আনুসাঙ্গিক ইক্যুইপমেন্ট ভাড়ার চুক্তি করি পাপ্পীর সঙ্গে। দুটি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে পাপ্পী দৈনিক টাকা তুলে নিয়ে গেলেও আমাদের কোনো ধরনের পেমেন্ট করেনি। ১০ মাসে আমার প্রতিষ্ঠানের ২ কোটি ৬২ লাখ ২৪ হাজার ২৮০ টাকার ক্ষতি হয়। আমার টাকা না দিলেও চট্টগ্রাম আদালতের বড় বড় আইনজীবীকে মামলায় নিয়োজিত করেছে।

ক্যাপ্টেন হাফিজের সরঞ্জাম নষ্ট এবং ভাড়া না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনছুর আলম পাপ্পী চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতেই সুরাহা হবে।

আরও পড়ুন: পাপ্পীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, ক্যাপ্টেন হাফিজের মালামাল উদ্ধারের নির্দেশ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।