বিদায়ের পথে রমজান

বিদায় শব্দটির সঙ্গে কষ্ট জড়িয়ে আছে। যে কোন বিদায় অনুভূতিতে নাড়া দেয়। আর রমজান তো এসেছিল রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের প্রাচুর্য নিয়ে। এ থেকে আমরা বঞ্চিত হবো, এরকম ভাবতেই কষ্ট হয়।
রমজান আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। আমরা কি পেরেছি রহমতের বৃষ্টিতে অবগাহন করতে, মাগফিরাতের সাগরে ভাসতে কিংবা পেয়েছি নাজাতের সুবাতাস।

রমজান তো তাকওয়া অর্জনের মাস। আমরা কি পেরেছি খোদাভীরু হতে। আল্লাহর ভয়ে সব রকম অন্যায়, অপকর্ম, লোভ ছাড়তে পেরেছি কী? তবে রমজান থেকে আমাদের অর্জন কি?

রমজান তো সহনশীল ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা কি আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি, না রমজান আসা-যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো। নিজেকে শুধরে নেয়ার সময় ছিল রমজান। আমরা কি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। অর্থাৎ লোভ-লালসা, গিবত, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, আত্ম-অহঙ্কার, মিথ্যা বলা, কার্পণ্য ইত্যাদি থেকে মুক্ত হতে পেরেছি।

এই রমজানে কুরআন এসেছে আমাদের কল্যাণের জন্য। কুরআনকে কতটুকু ভালোবাসতে পেরেছি। অর্থাৎ এ থেকে কতটুকু আমলে নিতে পেরেছি। মুক্তির মাধ্যম কিন্তু কুরআন। এর আলোকে নিজেকে আলোকিত করতে হবে।

রমজানের বিদায়লগ্নে পূর্বসূরি পুণ্যাত্মা মনীষীদের মধ্যে ভীতি ও প্রীতির মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হতো। যেমন তাঁরা আশায় বুক বাঁধতেন মহামহিম আল্লাহ হয়তো তাঁদের ক্ষমা করে দেবেন, তেমনি ভয় পেতেন রমজানে আল্লাহর মুক্ত ভাণ্ডার থেকে বঞ্চিত হওয়ার। তাঁরা আল্লাহর কাছে রমজানের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চাইতেন এবং রমজানের মূল শিক্ষা খোদাভীতি প্রাপ্তির প্রার্থনা করতেন।

ইয়াহইয়া ইবনে কাসির (রহ.) রমজানের শেষরাতে দোয়া করতেন—(উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা সাল্লিমনি ইলা রামাদান, ওয়া সাল্লিম লি-রামাদান, ওয়া তাসাল্লামহু মিন্নি মুতাকাব্বালান। (অর্থ) হে আল্লাহ! আমাকে (আগামী) রমজান পর্যন্ত সুস্থ রাখুন। রমজানকে আমার জন্য নিরাপদ করুন। রমজানকে (রমজানের ইবাদতগুলো) আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন।

আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, ‘আমাদের পূর্ববর্তী মনীষীরা রমজানের আগে ছয় মাস রমজানপ্রাপ্তির দোয়া করতেন এবং রমজানের পরে ছয় মাস রোজা ও ইবাদত কবুলের দোয়া করতেন। ’ রমজান বিদায় নেওয়ার পর খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তাঁর ঈদের খুতবায় দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা ও ইবাদত করার জন্য মানুষকে অভিনন্দন জানাতেন এবং উপদেশ দিতেন রোজা কবুলের দোয়া করতে।

আল্লাহকে পাওয়ার আর একটি মাধ্যম হলো দান। দান হলো পূণ্যের কাজ। অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে এক পূণ্যে ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বেশি সওয়াব। এর থেকে আমরা কি লাভ করেছি। টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, জ্ঞান-বুদ্ধি সবই তো আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া। তার সন্তুষ্টির জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করলাম।

আসুন রমজানের যতটুকু সময় আছে এর প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাই। কল্যাণকামী হই এবং আল্লাহর কৃপা লাভ করি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।