বিদ্যুৎ-পানি-জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে এখনও মজবুত। সারা বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্য-বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেলের অভাব। আমরা তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে। কিছুদিন বিদ্যতের জন্য কষ্ট হয়েছে, আল্লাহর রহমতে ভবিষ্যতে আর সে কষ্ট হবে না। কিন্তু আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ আপনাদের বিদ্যৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। এই শীতকালে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও জ্বালানি সংকটে পড়েছে। আমরা মানুষের সব রকমের সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। কিন্তু তা আপনাদের সহযোগীতার মাধ্যমে। বিদ্যুৎ-পানি-জ্বালানি তেল ব্যবহারে আপনাদের সকলকে সাশ্রয়ী হতে হবে।”

রোববার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর-দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়ে ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ডে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।

‘দেশে এখনও ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রির্জাভ আছে’—এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। তারা বলছে— ব্যাংকে টাকা নাই। অথচ এ কয়েকদিনে যারা ব্যাংকে টাকা তুলতে গেছে সবাই তো টাকা তুলতে পেরেছে। গুজব রটিয়ে চোরকে চুরি করার সুযোগ করে দিচ্ছে বিএনপি নেতারা। আমরা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসি এ রিজার্ভ তখন মাত্র ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল; আমরা সেটাকে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়িয়েছিলাম। তখন করোনাকালীন সময়ে পৃথিবীর বহু উন্নত দেশ ধনী দেশ বিনা পয়সায় কাউকে কোনো ভ্যাকসিন দেয় নাই। কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে। আমি দিয়েছি নগদ টাকা দিয়ে কিনে।”

তিনি বলেন, “আমরা রির্জাভের টাকা খরচ করেছি মানুষের জন্য খাদ্য, বিনা পয়সায় খাদ্য দিয়েছি। বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি ব্যবসায়ীদের। তাদের ব্যবসা বাণিজ্য যাতে চলতে পারে। শ্রমিকদের বেতন তাদের হাতে পৌঁছে দিয়েছি। কৃষকদেরকে আমরা টাকা দিয়েছি। যাতে তারা চাষবাস করতে পারে। আমরা ওষুধ কিনেছি। ভ্যাকসিন কিনেছি। সিরিঞ্জ আনতে হইছে। সেখানে কিনতে পারিনি স্পেশাল প্লেন পাঠিয়ে দিয়ে আমরা নিয়ে এসেছি। কেন? আমার দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। এখনো আমরা করোনার টেস্টিং, ভ্যাকসিন বিনে পয়সায় করি। কই? আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপ থেকে শুরু করে কেউ দেয় নাই। একমাত্র বাংলাদেশ; বিনে পয়সায় আমরা দিচ্ছি। কাদের জন্য? জনগণের জন্য। কারণ আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। জনগণের কথা ভাবি।”

বিদ্যুৎ-পানি-জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী 1

তিনি আরও বলেন, “আমরা দেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। চর বা দ্বীপ অঞ্চল কোথাও বাদ যায়নি। বাংলাদেশে খাদ্যের কোন অভাব নেই। আমাদের খাদ্য উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা মাছ, মাংস, ফলমূল- সবকিছুর উৎপাদন বাড়িয়েছি।”

বিএনপির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “জিয়াউর রহমান যেমন জাতির পিতাকে হত্যা করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। ওদের ধারণা ওইভাবেই তারা ক্ষমতায় যাবে। গণতান্ত্রিক ধারা তারা পছন্দ করে না।”

তিনি বলেন, “অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির খুব প্রিয় একটা তারিখ। বোধ হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদলেহনের দোসর ছিল বলেই ১০ ডিসেম্বর তারা ঢাকা শহর নাকি দখল করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে। আমি তাদের বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়া ‘৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল। আর ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল বলেই তাকে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছিল। জনতার মঞ্চ করেছিলাম আমরা। খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। দেড় মাসও যায়নি, খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। সে কথা বিএনপির মনে রাখা উচিত। জনগণের ভোট যদি কেউ চুরি করে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। ওরা তা ভুলে গেছে।”

তিনি আরও বলেন,“তারা জয় বাংলা স্লোগানও মুছে দিতে চেয়েছিলো। তবে আজকে আমরা তা ফিরিয়ে এনেছি। জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ আজ জাতিসংঘে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তারা এদেশের গণতন্ত্র হরণ করতে চেয়েছিলো। তারা বোমাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাস, চুরি, লুটপাট ও জনগণের অধিকার হরণ করেছে।”

সরকারপ্রধান বলেন, “আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ উন্নত হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নিত হয়েছে। দেশে একশত শিল্পনগর করা হচ্ছে। আমরা চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন করেছি সামনে আরও প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।”

এর আগে, এদিন বিকেল ৩টা ১০ নাগাদ ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ডে এসে পৌঁছান তিনি। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বাস্তবায়িত ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৪ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে দুরবিন দিয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠের উপস্থিত জনসমাগম দেখে চট্টগ্রামের ভাষায় কুশলাদি বিনিময় করেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।