দেশে বছরে দেড় লাখ ক্যান্সার রোগীর মৃত্যু

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ

‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’ অর্থাৎ ‘বৈষম্য কমাই ক্যান্সার সেবায়’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিবস। এ উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি।

ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল নামের একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদযাপন করা হচ্ছে দিবসটি যা পূর্বে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। এই সংস্থার সদর দপ্তর জেনেভায়। ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় দু’হাজার সদস্য রয়েছে সংস্থার।

জানা যায়, অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, অতিরিক্ত ধূমপান, মাদকগ্রহণ, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশ্ব ক্যান্সার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গ্লোবকোনের (জিসিও) তথ্যমতে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ। এর বাইরে প্রতিবছর আক্রান্ত হচ্ছেন দুই লাখ মানুষ। এদের বেশিরভাগেরই শনাক্ত হয় একেবারে শেষ সময়ে। ফলে প্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় অন্তত দেড় লাখ মানুষের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এতসব রোগীর জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২০০ জন। অর্থাৎ একজন চিকিৎসককেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ক্যান্সার রোগীকে। বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে আজ শনিবার দেশজুড়ে পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস।

গ্লোবকোনের মতে সারাবিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্তের চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মারা যান এক কোটিরও বেশি মানুষ। এমন অবস্থায় ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছরের মতো পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। চিকিৎসকরা বলছেন, পরিমিত জীবন-যাপন, ধূমপান পরিহার, ব্যায়ামসহ কিছু নিয়ম মেনে চললে যেকোনো ধরনের ক্যান্সার থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব।

দিবসটি আয়োজনের সঙ্গে জড়িতরা বলছে, ক্যান্সার দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই কর্কট রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের রোগ তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যান্সারের লক্ষণগুলো নির্ভর করে ক্যান্সারটি কোথায়, এটি কতটা বড় এবং এটি কাছাকাছি কোনো অঙ্গ বা টিস্যুকে কতটা প্রভাবিত করে কি না। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তারা বলেন, ক্যান্সার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এটা কী ধরনের রোগ, কী কী কারণে ঝুঁকি বাড়ে, প্রতিরোধের জন্য কী কী করণীয় সে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। শুধু জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেই গত তিন বছরে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৮৩ হাজার ৭৯৫ রোগী। যাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৩৩ জন রোগীর শরীরে। যা শতাংশের হিসেবে ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ। সম্প্রতি হাসপাতালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রোগীদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৪৬ জন (৫৫ শতাংশ) পুরুষ ও ১৬ হাজার ১৮৭ জন (৪৫ শতাংশ) নারী। পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের রোগী বেশি। যা মোট রোগীর প্রায় ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর নারী রোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী। যা শতাংশের হিসাবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।