মহেশখালী থেকে অস্ত্র যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, দুইদিনে আটক ৪

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিবেশ সময়ে সাথে সাথে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। অস্ত্রবাজি, রক্তারক্তি, হত্যার মতো বিষয়গুলো যেন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আশ্রয়ে থাকা অনেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি জড়িয়ে যাচ্ছেন মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কাছে অস্ত্র সরবরাহের কাজে। আর এসব অস্ত্র আনা হচ্ছে চট্টগ্রামের মহেশখালী থেকে। যার প্রমাণ ইতিমধ্যে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত দুই দিনে আরসার কাছে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে ৪ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। যারা সকলেই অস্ত্রগুলো মহেশখালী থেকে আনার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের চকরিয়ার বড় ভেওলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও নগদ অর্থসহ মোক্তার আহমদ (৫২), আব্দুর রহিম (৪০) এবং মো. এনামুল হক (৩৮) নামে ৩ জনকে আটক করা হয়। তারা মহেশখালী ও চকরিয়ার বাসিন্দা। এসময় তাদের কাছ থেকে তিনটি একনলা বন্দুক, একটি দুই নলা বন্দুক, চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র বিক্রয়ের নগদ এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা, এটিএম কার্ড, এনআইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়।

এদিকে গতকাল শুক্রবার রাতে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া থেকে অস্ত্রসহ আরিফ হোসেন নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে চারটি দেশে তৈরি শুটারগান, তিন রাউন্ড কার্তুজ ও দুটি অটো স্নাইপার রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আটক আরিফ হোসেন টেকনাফের নয়াপাড়া মোছনি ১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-ব্লকের বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার ৩ জনকে আটকের পর র‍্যাবের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালী ও চকরিয়া থানা এলাকায় গোপনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে বলে স্বীকার করেছেন। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যসহ বিভিন্ন দুষ্কৃতকারীদের কাছে নিয়মিত অস্ত্র বিক্রয় করে আসছে।

এদিকে শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মহেশখালী থেকে আনা অস্ত্রসহ আটক রোহিঙ্গা যুবক আরিফের বিষয়টি জানানো হয়।

র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এক ব্যক্তির মহেশখালী থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সন্ত্রাসীদের সরবরাহের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে শহরের বাহারছড়ায় তল্লাশির একপর্যায়ে এক ব্যক্তি র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগসহ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে আটক করা হলে প্লাস্টিকের ব্যাগে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, আটক ব্যক্তি নিজের পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র কিনে গোপনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সন্ত্রাসীদের সরবরাহের কথা স্বীকার করেন। মামলা দিয়ে আটক ব্যক্তিকে কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।

র‌্যাব অধিনায়ক আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে অস্ত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এদিকে মহেশখালী থেকে এভাবে একের পর এক অস্ত্র আসার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না সচেতন সমাজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্ত্রের কারবার ছড়িয়ে যাওয়ার আগে এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপশি জড়িতদের ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোথা থেকে কীভাবে এই অস্ত্র তৈরি হচ্ছে এবং বিক্রি হচ্ছে তাও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।