মিতু হত্যা— পিবিআইয়ের প্রতি এবার অনাস্থা মিতুর পিতার

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের প্রতি এবার আস্থা হারালেন মিতুর পিতা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। তিনি পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের প্রতি নারাজি দাখিল করেছেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিবর্তে র‌্যাব অথবা সিআইডিকে দিয়ে মামলাটি তদন্তের আবেদন করেছেন।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিমের আদালতে নারাজি আবেদন দাখিল করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। তিনি চট্টগ্রাম খবরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আদালত আগামী ৬ মার্চ মামলার নথিসহ শুনানির সময় নির্ধারণ করেছেন।

মোশাররফ হোসেন বলেন, মিতু হত্যার ঘটনায় মোটিভ শতভাগ রিকভার হয়েছে। খুনে বাবুলের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পিবিআই। নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ বাদি হওয়ার কথা থাকলেও তারা আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। কিন্তু আমার মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন বাদি হিসেবে আমার সাথে কথা না বলেই দিয়েছে। আমাকে এক প্রকার অন্ধকারে রাখা হয়েছে। তাই আমি মামলার তদন্ত অন্য সংস্থাকে দিয়ে করাতে চাই।

গত ২৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি চট্টগ্রাম খবরকে নিশ্চিত করেছিলেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা।

এর আগে একই দিন মিতু হত্যার ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় নিজের দায়ের করা হত্যা মামলায় জামিন চেয়েও পাননি বাবুল আক্তার। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক গত ২৭ ডিসেম্বর যে মামলার বাদি বাবুল আক্তার সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ৯ জানুয়ারি আদালত বাবুল আক্তারকে নিজের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন।

একই ঘটনায় মিতুর বাবার করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বাবুল আক্তার। এক ঘটনায় দুই মামলা চলতে পারে না জানিয়ে বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাব।

অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, পিবিআই আইন-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মতো মোশাররফ সাহেবকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। আমরা চাই ন্যায় বিচার হোক। আজকে মোশাররফ সাহেবের নারাজি দেওয়ায় আমাদের আগের কথাই সত্য প্রামাণিত হলো।

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে। ঘটনার পর তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ প্রথমে বাবুল আক্তারকে ফেরেশতা বললেও এই হত্যার জন্য একটা সময় পর থেকে বাবুলকে দায়ী করে আসছিলেন।

শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়। সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। তবে বাবুল পিবিআই থেকে মামলার তদন্তভার সরিয়ে অন্য সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন। ইতোমধ্যে পিবিআইতেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে তিন বার।

দীর্ঘ তদন্তের পর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার দাবি করে গত বছরের ১১ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুলকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। পরদিন ১২ মে দুপুরে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার শ্বশুর অর্থাৎ নিহত মিতুর বাবা। সেদিন থেকে কারাগারে আছেন বাবুল আক্তার।

মিতুর পিতার দায়ের করা মামলায় অপর সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।

আরও পড়ুন:
মিতু হত্যা: পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের শুনানি ২২ ফেব্রুয়ারি
৮ মাসের মাথায় মিতু হত্যা মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিলো পিবিআই
মিতু হত্যা: মামলার আইও পরিবর্তন হলেও তদন্ত করবে পিবিআই

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।