মিতু হত্যা: মামলার আইও পরিবর্তন হলেও তদন্ত করবে পিবিআই

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অধিকতর তদন্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশেনের (পিবিআই) পরিবর্তে অন্য কোনো সংস্থাকে দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ফলে মামলার তদন্তভার থাকছে পিবিআইয়ের হাতেই। তবে আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পরিবর্তনের আবেদনও ছিল। ইতোমধ্যে দুই দফা আইও পরিবর্তন হয়েছে।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) শুনানি শেষে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিমের আদালত এই আদেশ দেন।

গত ১৪ নভেম্বর বাবুল আক্তার তার নিজের দায়ের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত পিবিআইয়ের পরিবর্তে পুলিশের অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে করার আবেদন করেছিলেন বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।

অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, বাবুল আক্তারের দায়ের করা যে মামলা ছিল সেটা পিবিআইয়ের পরিবর্তে পুলিশের অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে অধিকতর তদন্তের আবেদন আমরা করেছিলাম। আজ (বুধবার) সংস্থার বিষয়ে শুনানি হয়েছে। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। সেইসঙ্গে আমরা তদন্তকারী কর্মকর্তার পরিবর্তনও চেয়েছিলাম। তদন্তকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যে পরিবর্তন হয়ে গেছে।

আবেদনের পর দুই দফা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। তৎকালীন আইও সন্তোষ কুমার চাকমা পিবিআই থেকে সিএমপিতে বদলি হয়েছেন। এরপর তদন্তভার যায় বাবুলে তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন সেলিমের হাতে। মহিউদ্দিন সেলিম সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদন্নোতি পেয়ে সিএমপিতে বদলি হলে মামলার তদন্তভার যায় পুলিশ পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুকের হাতে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক গত ২৭ ডিসেম্বর যে মামলার বাদি বাবুল আক্তার সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ৯ জানুয়ারি আদালত বাবুল আক্তারকে নিজের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন।

একই ঘটনায় মিতুর বাবার করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বাবুল আক্তার। এক ঘটনায় দুই মামলা চলতে পারে না জানিয়ে বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাব।

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে। ঘটনার পর তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ এই হত্যার জন্য বাবুলকে দায়ী করে আসছিলেন।

শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। মিতুর বাবার করা মামলাটিও তদন্ত করছে পিবিআই।

দীর্ঘ তদন্তের পর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গত বছরের ১১ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুলকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। পরদিন ১২ মে দুপুরে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার শ্বশুর অর্থাৎ নিহত মিতুর বাবা। মামলায় বাবুল ছাড়া আরও সাতজনকে আসামি করা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।