মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্যাতিত জাতিসমূহের মুখপাত্র

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের কালপঞ্জিতে আগস্ট শোকের মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শোষিত, নির্যাতিত, শৃঙ্খলিত বাঙালি জাতির ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং ’৭১-এর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার দর্শন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছিল তাঁর জীবদ্দশায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্যাতিত জাতিসমূহের মুখপাত্র।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, রাউজান থানা আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ১১নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনী প্রধান, রাউজানে সমবায় আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যান স্মৃতি গণপাঠাগার-এর উদ্যোগে এবং সমাজ, সংস্কৃতি, উন্নয়ন, মানবাধিকার, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তচিন্তার জবাবদিহিমূলক সংগঠন ‘আমরা করবো জয়’-এর সার্বিক সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে লাখ টাকার “মুজিব-ইন্দিরা স্মৃতি প্রণোদনা” অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের চরম দুর্ভাগ্য ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানপ্রেমী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আলোকাভিসারী এক জাতিকে পশ্চাৎপদতার অন্ধকারে নিক্ষেপ করেছে। বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি তাঁর নিষ্ঠাবান ঘনিষ্ঠ সহচরদেরও যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার সাথে স্মরণ করতে হবে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আরো বলেন, রাউজানের প্রান্তিক জনপদে মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যান গণপাঠাগার যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয় হতে পারে।

পাঠাগারের প্রণোদনা প্রদান উদ্যোগকে একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন অভিহিত করে তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সময়োপযোগী উদার রাজনীতি দর্শনের ধারক ও বাহক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর উদারনৈতিক রাজনৈতিক দর্শন শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বের জন্য সমান প্রয়োজনীয়।’

আমরা করবো জয়-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং পাঠাগারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালির সভাপতিত্বে ১২ আগস্ট, সকাল ১১টায়, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আসাদুর রহমান কিরণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, পিএইচপি ফ্যামেলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পায়ন ও ডিবি) সুজন চন্দ্র সরকার, যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম দিদার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক মহসিন কাজী, নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি দীপংকর চৌধুরী কাজল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ওসমান গণি লিটন, চসিক কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল, লেখক ও গবেষক মোস্তাক আহম্মদ প্রমুখ।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শওকত আল-আমিনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন-তরুণ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মো. সাজ্জাদ উদ্দিন, লেখক ও ব্যাংকার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্ল্যাহ চৌধুরী ভাস্কর, সহ-সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম জাবেদুল আলম সুমন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিথুন মল্লিক, অ্যাডভোকেট মো. সাহাব উদ্দিন, সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সূচিত্রা গুহ টুম্পা, সহ-প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাজীব চৌধুরী, কার্যকরী সদস্য আকিব জাবেদ, মুক্তা হাওলাদার, বাঁশখালী থানা কমিটির সদস্য সচিব আজমীরুল ইসলাম, কবি আজাদ বাকী, দর্পন সাহা, অ্যাডভোকেট মিশকাতুল কবির, শওকত হাসান, শওকত হাফেজ, আইন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা কামরুল আলম মিন্টু, নোমান তালুকি, জয় বাংলা শিল্পিগোষ্ঠী চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সজল দাশ, এম.এ ফাউন্ডেশনের সভাপতি নাঈম আশরাফ অভি, ডা. শাকিব খান, ডা. আবু জাফর প্রমুখ।

আয়োজনে একক কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আবৃত্তিশিল্পী ও গবেষক ডালিয়া বসু সাহা।
অনুদান প্রাপ্ত সংগঠনগুলোর পক্ষে চট্টগ্রাম লিট্ল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি কমলেশ দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের সভাপতি শৈবাল চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল, সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজানের সভাপতি সাইদুল ইসলাম ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মঈনুদ্দিন জামাল চিশতী, পান্থজনের নির্বাহী প্রধান মিথুন মল্লিক, জননেতা রহমতউল্ল্যা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্ল্যাহ চৌধুরী ভাস্কর, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ-আন্দরকিল্লার পৃষ্ঠপোষক জাবেদ সুমন, ইহাম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাংবাদিক আহসানুল কবির রিটন ও ডাব্লিউএসও ফাউন্ডেশনের অর্থ পরিচালক শিরিন হক, শৈশবের পক্ষে সুচিত্রা গুহ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ রাউজানের অর্থ সচিব নির্মল দে।

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজকে বিভাজিত করার অপচেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধু এসবের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর দর্শনের প্রধান উপাদান ধর্ম-নিরপেক্ষতা। বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রবাদী মানুষ ছিলেন। তিনি একই সাথে গণতন্ত্রকামী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্র দিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়।

সভাপতির বক্তব্যে শওকত বাঙালি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠনগুলির কর্মযজ্ঞ টাকার অংকে মূল্যায়ন করা যাবে না। প্রণোদনা প্রদান মানেই তাঁদের কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদান। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামাংকিত সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মযোগী সংগঠনগুলিকে সম্মানিত করতে পেরে আয়োজক কর্তৃপক্ষ সম্মানিত বোধ করছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।