মুরগিতে স্বস্তি এলেও নাগালের বাইরে মাছ

আগ্রাবাদ মাছের বাজারে মাছ কিনতে এসেছিলেন সিজিএস কলোনীর বাসিন্দা মো. জুয়েল। মাছ বাজারে অনেকক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরে দরদাম করে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। মাছ না কিনে চলে যাচ্ছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাছের দাম খুব বেশি। বাজেটে মিলছেনা। মাসের শেষ দিক, পকেটের অবস্থাও নাজুক। আজ কোনমতে নিরামিশ চালিয়ে নেব। এই বলে মুখে করুণ হাসি ফুটিয়ে তরকারি বাজারের দিকে হাঁটা ধরেন তিনি।

এদিকে মাছের দাম যেমন বেড়েছে, বাজারে তেমনি কমেছে মাছের সংখ্যাও। সপ্তাহ দুয়েক আগেও আগ্রাবাদের এ মাছ বাজারে দেখা যেতো বড় বড় অসংখ্য মাছ। এখন সে স্থান দখল করেছে পাঙাশ, তেলাপিয়া ও রুইসহ সাগরের মাছ। এ বিষয়ে মাছ বিক্রেতারা জানান, ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পড়ে না এমন মাছ উঠালে অবিক্রীত রয়ে যায়।

নগরীর ব্যাপারীপাড়া বাজারে রিকশাচালক আব্দুল মোতালেব কিনছিলেন রোজার সামগ্রী। ছোলা, চিনি, তেল, ডাল ও বেসন কিনলেও তা ছিলো চাহিদার তুলনায় অনেক কম। মোতালেব বলেন, একটা সময় দিন এনে দিন খেতে কষ্ট হয়নি। আয়ের সাথে ব্যয়ের মিল ছিলো। এখন সারাদিন রিকশা চালিয়ে রোজার বাজার তো দূরের কথা দৈনন্দিন বাজারও করা দায়।

বাজার করতে আসার সময় ছোট ছেলেটা বলছিলো ভালো থেকে খেজুর নিতে। খেজুর না নিতে পারলে ছেলের সামনে লজ্জায় পড়ে যাব। খেজুরের দাম শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। যোগ করলো মোতালেব।

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে জুয়েল ও আব্দুল মোতালেবের মতো মানুষরা বাজার করতে এসে খুশিমনে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। উর্ধ্বগতির এ বাজারে মাছ-মাংসের আশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকেই। শাক-সবজি কিনতে গিয়েও ফেলতে হচ্ছে দীর্ঘশ্বাস।

রমজানের শুরুতে মুরগির দাম চড়া থাকলেও কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মুরগিতে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে মুরগির দাম কমেছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। দাম কমার পরও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় পৌছাতে পারেনি ব্রয়লার মুরগি। চৌমুহনী এলাকায় দেখা যায় আলাদা করে বিক্রির জন্য রাখা মুরগির ডানা ও পা কেনার দিকে ঝুঁকছে মানুষজন। সেগুলোও কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। মুরগির ডানা ও পা কিনতে আসা সাফিয়া আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে মুরগি পাওয়া যেতো, সেই দামে এখন মুরগির হাবিজাবি কিনতে হচ্ছে। বাসায় বাচ্চাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে নিরুপায় হয়ে এসব কিনতে হচ্ছে। আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই!’

নগরীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসের দোকানগুলোতে দেখা যায় ক্রেতাহীন ঝুলছে মাংস। দোকানিরা ছাড় দিতে রাজি নন ৭শ টাকা থেকে ৭ পয়সাও। এদিকে ক্রেতা কম থাকায় কসাইরা কাটাচ্ছেন অলস সময়। জুড়ে দিয়েছেন একে অপরের সাথে গল্প। নুর উদ্দিন নামের এক মাংস বিক্রেতা বলেন, অন্যান্য বছরগুলোতে রমজানে মাংস দুপুর হবার আগে বিক্রি হয়ে যেতো। এবছর সম্পূর্ণ মাংস বিক্রি হতে রাত হয়ে যাচ্ছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে আমরাও বুঝতেছি। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। গরুর দাম খুবই চড়া। লোকসানতো দিতে পারব না।

রমজানকে ঘিরে উর্ধ্বগতির আগুনের আঁচ লেগেছে সবজি বাজারেও। ২০ টাকার টমেটো গিয়ে ঠেকেছে ৪০ এ। শসা, গাজর পেপের দামও বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ৩০ টাকার বেগুন দ্বিগুণ হয়ে এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পিসপ্রতি লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকারও উপরে। রমজানে কাঁচাবাজারের দাম আর না বাড়লেও কমার সম্ভাবনা কম বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। সবজি বিক্রেতা ওসমান গনি বলেন, কোন কিছুরই দাম কমার সম্ভবনা দেখছিনা। কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাই বিক্রিও করছি বেশি দামে। কাঁচাবাজার করতে এসে হাজিপাড়ার বাসিন্দা মুন্না বলেন, যে ব্যাগে করে বাজার নিয়ে যাব সেটারও তো দাম বেড়ে গেছে। রমজানে প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনতেই এখন ভাবতে হচ্ছে। না কিনেও উপায় নেই। খেতে তো হবে।

এবারের রমজানে দাম বেড়েছে সকল ইফতার সামগ্রীরও। এ অবস্থায় অনেকের ইচ্ছা থাকলেও চাহিদা মাফিক ইফতারি কিনতে পারছেন না। তবে বিক্রেতারা বলছেন- অনেকেই আসছেন, দেখছেন, দাম জিজ্ঞাসা করছেন কিন্তু না কিনেই ঘুরে যাচ্ছেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।