মেয়ে হারিয়ে বাবার আর্তনাদ থামছেই না

সবার ছোট সন্তান ছিলো শিখা মালাকা (৩০) । বিয়ে হয়েছে ১৬ বছর আগে। একমাত্র মেয়েকে শেষকৃত করে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা কৃষ্ণ দাশ। কিছু সময় পর পর হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠে জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনেরা। তার কান্নায় স্বজনদের চোখও যেন ভারী হয়ে উঠছে।

বলছিলাম গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে খোলা বাজারে ওএমএসের চাল কিনতে গিয়ে স্ট্রোক করে মারা যাওয়া শিখা মালাকারের বাবার আর্তনাদের কথা। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে নিহত শিখা মালাকার স্বামীর বাড়িতে গেয়ে দেখা যায়, মা হারা দুই নাতি-নাতনীদের জড়িয়ে কান্নার বিলাপ যেন থামছেই না নিহত শিখা মালাকার বাবা কৃষ্ণ দাশের।

নিহত শিখা মালাকার সিতাকুণ্ড পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম মহাদেবপুর এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামী তপন দাশ খাস্তগীর বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক হিসাবে কর্মরত আছেন। তাদের শিশু কুমার দাশ (১৫) ও শিথী রানী দাশ (১১) নামের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

কান্না বিজড়িত কন্ঠে শিখা মালাকার বাবা কৃষ্ণ দাশ বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে শিখা মালাকার সবার ছোট ছিলো। মেয়েটি পরিবারের জন্য অনেক কষ্ট করতো। কিন্তু মেয়ে এত অল্প বয়সে চলে যাবে কখনও চিন্তাও করেনি। ছোট দুই নাতি-নাতিনদের কি হবে এখন!

জানা গেছে, খোলা বাজারে চাল কেনার জন্য শিখা মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে লাইনে দাঁড়ান। লাইনে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণ পর ক্রমশই লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে চাল শেষ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় হুড়োহুড়ি শুরু করেন তারা। এতে ভিড়ের চাপে পড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শিখা মালাকার। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে তাকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে।

চালের ডিলার গোলাম রব্বানী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খোলা বাজারে ওএমএসের চাল দেওয়ার কথা সকাল ৯টা থেকে। কিন্তু শিখা মালাকার সকাল ৮টা থেকে চাল কিনার উদ্দেশ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে ভিড়ের মধ্যে তিনি স্ট্রোক করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ভিড়ের চাপে পড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।