রক্ষা পাচ্ছে সিআরবি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা

হেমন্তের বিকেল, শীতের ভাবও আছে খানিকটা। চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি চত্বরে জড়ো হয়েছেন প্রকৃতিপ্রেমী নগরবাসী। এর খানিকটা পরে শুরু হয় জাতীয় সংগীত, জাগরণের গান, লালনগীতি, আবৃত্তি, অভিনয় আর বিশিষ্টজনদের বক্তব্য। আনন্দ-উল্লাসে একাকার হয়ে ওঠেন সকলে। চোখে-মুখে স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয় তৃপ্তির চিহ্ন। আর এর পেছনের কারণ—সিআরবি থেকে হাসপাতাল সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও ভুলেননি সবুজপ্রিয় চট্টগ্রামবাসী।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে সিআরবি চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় সিআরবি রক্ষায় গঠিত নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের সমাপনী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। আর আগামীকাল শীর্ষ রাজনৈতিক, মন্ত্রী, মেয়র আর বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে আনন্দ মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সবুজ রক্ষায় ৪৮৩ দিনের প্রতিবাদী এই আয়োজন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক সমাজের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, “আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই-তিনি চট্টগ্রামবাসীর আবেগের প্রতি একত্মতা প্রকাশ করে সিআরবি থেকে হাসপাতাল সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, আমাদের বিশ্বাস ভবিষ্যতেও চট্টগ্রামের এই সবুজ প্রকৃতি সিআরবি রক্ষা করার জন্য তিনি আরো উদ্যোগী হবেন। পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে বিশ্বে অন্যতম পরিবেশবাদী নেতা হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”

এতে বক্তরা বলেন, “দীর্ঘ দেড় বছরের কাছাকাছি ধরে সিআরবিকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন করে আসছে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম ও চট্টলার সাধারণ আপামর জনতা। প্রগতিশীল সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, যুব আর ছাত্রনেতা, তারুণ্যের হাতধরে গড়ে উঠা নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম আন্দোলন চালিয়ে নিয়েছে বিরতিহীনভাবে। যা একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি। এমনকি ঈদ, পূজাপার্বণসহ উৎসবের দিনও চলেছে। আন্দোলন ইতিহাসে এমন দীর্ঘ লম্বা আন্দোলন নজিরবিহীন। টানা ৪৮২ দিনের আন্দোলন প্রতিকূল আবহাওয়া, রোদ, বৃষ্টি কোনো কিছুই থামাতে পারেনি। নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম অনেক সহকর্মী তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে এ আন্দোলনে প্রতিদিন উপস্থিত হয়েছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আর চট্টগ্রামের সিংহভাগ সমাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক সংগঠন এ আন্দোলনে সম্মতি জানিয়ে এ আন্দোলনে উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।”

তারা আরও বলেন, “বিশেষ করে সাংবাদিক ভাইয়েদের কাছ থেকে আমরা যে পরিমাণ সাপোর্ট পেয়েছি তা বলার বাইরে তাদের প্রতিও অশেষ কৃতজ্ঞতা। আর যারা আমাদের আন্দোলনের মূলশক্তি চট্টলার সাধারণ জনগণ ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, শ্রমিক, কৃষক, দিনমজুর, সমাজিক সংগঠনন সর্বপরি সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আপনারাই এ আন্দোলনের গতিপথ দেখিয়েছেন আপনাদেরই প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।”

রক্ষা পাচ্ছে সিআরবি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা 1

অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতের পর সিআরবিকে নিয়ে লেখা প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের, অসীম দাশগুপ্ত ও নারায়ণ দাশ। অনুষ্ঠানে অন্যন্যদের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেন— সাইফুদ্দিন মাহমুদ খান, কায়সারুল আলম, সৈয়দ মোসলেহ উদ্দিন মানিক, অজয় চক্রবর্তী, রনি দাশ, কথা চৌধুরী, জুলি,শাহীন রহমান, সীমা সেন,প্রেম লাল, ঐশী ভট্টাচার্য, অসীম দাশ, হাসান জাহাঙ্গীর। কবিতা পাঠ করেন, কবি আবু মুসা চৌধুরী, উৎপল কান্তি বড়ুয়া, মোদাচ্ছের আলী, মিনু মিত্র, বিপ্লব কুমার সেন, আবৃত্তি করেন তৈয়বা জহির আরশি, শ্রুতিনাটক করেন মঈন উদ্দিন কোহেল ও ইলমা আইলিন মৃত্তিকা। বউল গান পরিবেশন করেন, ড. হানিফ মিয়া।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাসেম, নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুরজ রহমান, নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আব্দুচ সালাম, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. এইচএম জিয়াউদ্দিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, শ্রমিকলীগ নেতা আহাদ, কেন্দ্রীয় জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, ঋত্বিক নয়ন, বেলায়েত হোসেন, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মুন্না, যুব নেতা হেলাল উদ্দিন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক সম্পাদক নূরুল আজিম রনি, শিবু দাশ, সব্যসাচী টিটু, রাহুল দাশ, অ্যাডভোকেট রাশেদুল আলম, সাজ্জাদ হোসেন জাফর, মাহমুদুল করিম, মাইমুন উদ্দিন মামুন প্রমুখ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।