রমজানই জাকাত দেওয়ার সর্বোত্তম সময়

রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। জাকাত বিত্তশালীদের সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে। জাকাত দেওয়ার ফলে জাকাত দাতার সম্পদের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জাকাত আদায় করতে হয়। রমজান মাস আল্লাহর মাস। রমজান মাসে যেকোনো ফরজ, ওয়াজিব সুন্নত ও নফল কাজ আদায় করলে আল্লাহ এর সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে বান্দাকে নিজ হাতে প্রতিদান প্রদান করবেন। জাকাত বছরের যেকোনো সময় দেয়া যায়। তবে রমজানে জাকাত দেওয়ার সর্বোত্তম সময়। রমজানে জাকাত দিলে আদায়কারী ও গ্রহীতারা উভয়ই বেশি ‍উপকৃত হয়।

পবিত্র কোরআনের ৮২টি স্থানে নামাজের পর পরই জাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন।’ -সূরা বাকারা: ১১০

কোরআনের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো, জাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’ -সূরা নূর: ৫৬

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন; কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি; কিয়ামতের দিন তা বিষধর সাপ হয়ে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় প্যাঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধর প্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ওই ধন, আমিই তোমরা পুঞ্জীভূত সম্পদ।’ (সহিহ বুখারি)।

ইসলামে সমাজের দরিদ্র জনসাধারণের আর্থিক প্রয়োজনের ব্যাপকতার প্রতি লক্ষ রেখে তৃতীয় হিজরিতে ধনীদের ওপর জাকাত ফরজ করা হয়েছে। সমাজে ধনসম্পদের আবর্তন ও বিস্তার সাধন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের মহান উদ্দেশ্যেই জাকাতব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকার সমস্যা সমাধানই জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত জাকাত বণ্টনের খাতগুলোর প্রতি লক্ষ করলে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। আল্লাহ বলেন, ‘সাদকা বা জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত, জাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্ত ব্যক্তিদের, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য; এটা আল্লাহর বিধান।’ (সুরা আত-তাওবা, আয়াত ৬০)।

জাকাত কোনো করুণার বিষয়বস্তু নয়। জাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হয় এবং সম্পদের পরিমাণ কমে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘সেসব মুশরিকদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য, যারা জাকাত দেয় না’। (সূরা হামিম আস সাজাদা:৭-৮)।

বুখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহর দেয়া ধন-মালে কার্পণ্য করে, তারা যেন মনে না করে যে, তাদের জন্য তা মঙ্গলময় বরং তা তাদের জন্য খুবই খারাপ। তারা যে মাল নিয়ে কার্পণ্য করেছে, তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি দেয়া হবে’। নামাজ ও জাকাত একটি অপরটির পরিপূরক। হজরত আবু বকর রা: তার খেলাফতের সময়কালে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি অবশ্যই সেসব লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, যারা নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে। আল্লাহর কসম, তারা যদি একট উটের রশিও দিতে অস্বীকার করে, যা রাসূল সা:-এর জমানায় তারা দিত।

জাকাত প্রদানে যারা কার্পণ্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন এবং হাদিস শরিফে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, এটা তাদের জন্য মঙ্গল। না, এটা তাদের জন্য অমঙ্গল। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তাই তাদের গলায় বেড়ি হবে। আসমান ও জমিনের স্বত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা করো আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবগত।’ -সূরা আলে ইমরান: ১৮০

হাদিস শরিফে এসেছে, যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর স্বর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধরপ্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ওই ধন, আমিই তোমার পুঞ্জিভূত সম্পদ।’ –সহিহ বোখারি

রমজানের এই পবিত্র সময়ে জাকাত দেওয়াই মুমিন মুসলমানের সম্পদশালীদের জন্য সর্বোত্তম সময়। তাই প্রত্যেক ধনী ও সম্পদশালীর উচিত, জাকাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ ইবাদত রমজানের বরকতময় সময়ে যথাযথভাবে আদায়ের মাধ্যমে কুরআনের ঘোষণায় নেয়ামত, বরকত, অনুগ্রহ ও মহাপুরস্কার পাওয়ার চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সম্পদশালী ও ধনীদের রমজানে জাকাত আদায় করে অফুরন্ত সওয়াব ও ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন। গরিব-অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

এফএম

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।