রমজানে চট্টগ্রাম বন্দরে স্টোর রেন্ট বাড়বে চারগুণ

চট্টগ্রাম বন্দর দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান গেটওয়ে। আর রমজান মাসকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয়। তবে বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাসে ধীরগতিতে বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত কন্টেইনারের চাপে বন্দরের স্বাভাবিক পণ্য হ্যান্ডলিং ব্যাহত হচ্ছে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেইনারের ওপর ৪ গুণ হারে স্টোর রেন্ট আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ রেট অনুসারে, জাহাজ থেকে নামানোর প্রথম চার দিন ২১ ফুটের বেশি একটি কন্টেইনার বিনা খরচে রাখার সুযোগ আছে। এরপরে প্রথম সাত দিন ভাড়া ১২ ডলার। অষ্টম দিন থেকে ২০তম দিন পর্যন্ত ২৪ ডলার হিসেবে মাশুল পরিশোধ করতে হয়। এরপর থেকে প্রতিদিনের ভাড়া ৪৮ ডলার, যা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে চারগুণ অর্থাৎ ১৯২ ডলার হিসাবে দৈনিক মাশুল গুনতে হবে।

এছাড়া ৪১ ফুটের বেশি কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামানোর প্রথম ৪ দিন মাশুল ছাড়া রাখা যায়। এরপর প্রথম সাত দিন ভাড়া ১৮ ডলার। অষ্টম দিন থেকে ২০তম দিন পর্যন্ত ৩৬ ডলার। এরপর থেকে প্রতিদিনের ভাড়া ৭২ ডলার, যা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে চারগুণ অর্থাৎ ২৮৮ ডলার হিসাবে দৈনিক মাশুল গুনতে হবে।

জানা যায়, আমদানিকারকরা রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেন। অধিকাংশ আমদানিকারকের নিজস্ব গুদাম না থাকায় তারা বন্দরের ইয়ার্ডকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে চান। পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে সুযোগ বুঝে পণ্য খালাস নেন তারা। এক্ষেত্রে আমদানিকারকরা স্টোর রেন্ট বাবদ জরিমানা গুনতে হলেও বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, বন্দরের ইয়ার্ডের থাকা কন্টেইনার ডেলিভারি না বাড়লে গত ১৫ মার্চ থেকে ৪ গুণ বর্ধিত স্টোর রেন্ট বাড়ানোর কথা বলা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে তখন আর রেন্ট বাড়ানো হয়নি। তবে রমজান মাসে বন্দরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এবার বাধ্য হয়ে ৪গুণ স্টোর রেন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কারণ আমদানিকৃত এফসিএল (ফুল কন্টেইনার লোড) কন্টেইনার অনেকে বন্দরের অভ্যন্তরে ফেলে রাখেন। এতে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে প্রভাব পরে। তবে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া গত রোববার স্টেকহোল্ডারদেরকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের জারি করা এক সার্কুলারে বন্দর ব্যবহারকারী, আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও বন্দরের স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়, সম্প্রতি অনেক আমদানিকারক এফসিএল কন্টেইনার ভর্তি পণ্য এনে বন্দরের অভ্যন্তর হতে খালাস না নিয়ে দিনের পর দিন বন্দরে স্টোর করে রাখে। এতে বন্দরের ভেতরে পড়ে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটে। একারণে বন্দরের সকল ব্যবহারকারী ও আমদানিকারকদের দ্রুত কন্টেইনার খালাস নিতে অনুরোধ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যথায়, রেগুলেশন ফর ওয়ার্কিং অব চিটাগাং পোর্ট (কার্গো এন্ড কনটেইনার), ২০০১ এর ১৬০ ধারার আলোকে কমন ল্যান্ডিং ডেট এর স্ল্যাব শেষে ৪ গুণ বর্ধিত স্টোর রেন্ট কার্যকর করা হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, কন্টেইনার খালাসের গতি কমে গেলে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের নোটিশ দিয়ে থাকে। এটা এক রকম হুঁশিয়ার করে দেয়া। তারপরও যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় সেক্ষেত্রে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বাধ্য হয়ে জরিমানা আরোপ করতে হয়।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট)। পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক রাখতে সক্ষমতার ১৫ ভাগ খালি রাখতে হয়। সেই হিসেবে বন্দর ইয়ার্ডে ৪১ হাজার ৬৬৫ টিইউএস কন্টেইনার জমা থাকলে সেটি স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়। ২৯ মার্চ বেলা ১১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে দেখা যায় ৪১ হাজার ৩৩২ টিইইউএস কন্টেইনার। এছাড়া ২৮ মার্চ বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ৩ হাজার ৮৬২ টিইইউএস কন্টেইনার।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।