রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জিম্মি করে ব্যবসা- বিপাকে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা

মধ্যপ্রাচ্যগ্রামী সব রুটে বিমানের টিকিটের দাম বাড়িয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। বিপরীতে কোন কোন এয়ারলাইন্স ইউরোপগামী ফ্লাইটের টিকিটে দিচ্ছে মূল্য ছাড়। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে বাংলাদেশ বিমানকে দিয়ে চাটার্ড ফ্লাইট চালু করবে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হলো মধ্যপ্রাচ্য। যার মধ্যে শীর্ষে আছে সৌদি আরব এবং এরপরেই রয়েছে ওমান, কাতার, বাহরাইনের মতো দেশগুলো। বাংলাদেশ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ ও টার্কিশ এয়ারলাইন্সসহ দেশি-বিদেশি অনেক এয়ারলাইন্স আকাশপথে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

করোনাকালীন কাজ না থাকার কারণে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশে ফেরত আসেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে বর্তমানে আবারও তারা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত কর্মস্থলে ফেরত যাওয়া শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ এই রুটে টিকেটের অতিরিক্ত বিমান ভাড়ার কারণে দিশেহারা রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। বিমান ভাড়া বাড়ানোয় বিপাকে ওমরাহ যাত্রীরাও।

মধ্যপ্রাচ্যের সব রুটে টিকেটের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির কারণ তারা বলছে জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি পাওয়া। তবে তার বিপরীতে ইউরোপ, আমেরিকাগামীদের বছরব্যাপী বিশাল ছাড় দিচ্ছে টিকিটের মূল্যে। এমিরেটস এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক জেএফকে- ৬৭ হাজার ৮৬৪ টাকা, টরন্টো- ৯৭ হাজার ৫৫৪ টাকা, লন্ডন- ৬১ হাজার ৭৭ টাকা, রোম- ৪৮ হাজার ৭৭৭ টাকা এবং ইস্তানবুল- ৫০ হাজার ৮৯৮ টাকা।

এই তালিকা দেখার পর বিদেশগামীরা প্রশ্ন তুলছেন দূরত্ব বিবেচনায় পশ্চিমা বিশ্বের খরচ বেশী হওয়ার কথা। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি পেলে তো ইউরোপগামী বিমানেরও টিকিটের দাম বাড়ানোর কথা। কিন্তু সেখানে ছাড় দিয়ে যারা জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে তাদের কেন জিম্মি করা হচ্ছে?

বিমান ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও প্রায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি রাখা হচ্ছে। অনেক প্রবাসী এই বিষয়ে জানান- অন্য সময়ে মধ্যপ্রাচের যে টিকেটের দাম ৩০ হাজার টাকা ছিল বর্তমানে সেই টিকেটের দাম প্রায় ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা রাখা হচ্ছে। এমনকি অন্য সময়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে রিটার্ন টিকেটসহ (আসা-যাওয়া) ২ পথে যাত্রা করা যেত। কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র যে কোন একটি পথে যাত্রা করতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হচ্ছে।

বিমান কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে এই রুটে টিকেটের কৃত্রিম সৃষ্টি করে টিকেটের দাম বাড়িয়েছে, এই অভিযোগ করছেন বিদেশগামী যাত্রীরা।

হঠাৎ বিমান ভাড়া এত বেশি কেন এই বিষয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলোর নিকট বেবিচক চিঠি লিখলেও সেই চিঠির কেউ জবাব দেয়নি। বেবিচকসহ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বিমান বাংলাদেশ ভাড়া কমালেও অন্য কোম্পানীগুলো তাদের অবস্থান থেকে সরছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহেল কামরুজ্জামান চট্টগ্রাম খবরকে জানান– বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বেবিচক চেয়ারম্যানের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত (৫ জানুয়ারি, দুপুর ১টা) কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন– মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্স ভাড়ার দাম না কমালে তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে একই সময়ে প্রয়োজনে চাটার্ড ফ্লাইট চালু করা হবে।

তবে মধ্যপ্রাচ্যগামী প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ বিমানের অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করবেন মর্মে আশ্বাস দিয়েছেন– বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. আবু সালেহ্‌ মোস্তফা কামাল।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।