লংগদুতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে যৌন-চর্ম ওষুধ; একইভাবে চলে দন্ত চিকিৎসাও!

জীবন বাঁচানোর ওষুধ নিয়ে রাঙামাটির লংগদুতে ফুটপাতে চলছে ছেলেখেলা। মনভোলানো নানা কথায় চলে ওষুধ বিক্রি। এসব ওষুধে নাকি মেলে সর্বরোগের সমাধান। আর সেই আশায় ব্যস্ত পথিকও দাঁড়িয়ে পড়েন ফুটপাত অথবা রাস্তার মোড়ে। যদিও আইনে স্পষ্ট বলা আছে, অনিবন্ধিত কোনো স্থানে ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। আর ওষুধ প্রশাসন বলছে, অবৈধভাবে ওষুধ বিক্রি ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ওষুধের যত্রতত্র ব্যবহার হুমকিতে ফেলছে জনস্বাস্থ্য।

ওষুধ প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী ড্রাগ লাইসেন্স ও সাইনবোর্ড ছাড়া ওষুধ ব্যবসা পরিচালনা করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, শুষ্ক ও রোদ মুক্তস্থানে ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু তা মানছেন না বৃহত্তর মাইনী বাজারসহ উপজেলা বিভিন্ন হাট-বাজার, পথে-ঘাটে ও ফুটপাতের ওষুধ ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, সরকারি নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও পথে-ঘাটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের ট্যাবলেট ও এ্যান্টিবায়েটিক সহ যৌন উত্তেজক ওষুধ। ফুটপাতে মাইকিংয়ের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা নাম সর্বস্ব কোম্পানীর নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করছেন। এসব ওষুধ ক্রয় করে একদিকে প্রতারিত হচ্ছে গ্রামের সহজ সরল মানুষ। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন তারা। প্রশাসনের পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় সচেতন মহল।

যদিও জেলা ড্রাগ সুপার বলছেন, নিয়মিত হাট-বাজার গুলোতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ওষুধ জব্দ করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

এদিকে, ফুটপাতে ওষুধ বিক্রি করার নিয়ম না থাকার কথা স্বীকার করে পেটের দায়ে তারা এ ব্যবসা করছেন বলে জানান মো. মিজান। তিনি বলেন, স্থানীয় ভাবে ও বাহির থেকে এসব ভেজাল ও ক্ষতিকারক ওষুধ সরবরাহ করে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে এ পর্যন্ত প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও তিনি জানান।

এদিকে নিয়মিত হাট-বাজার গুলোতে অবৈধ ওষুধ জব্দ করার পাশাপাশি বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানান রাঙামাটির জেলা ঔষধ প্রশাসনের (এডি) ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসাইন রাজু আকন্দ। তিনি বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফুটপাতের দাঁতের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম জানান, পৈতৃক সূত্রে তিনি এ পেশায় জড়িত। রুটি-রুজির জন্য এ পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি করেন দাঁত তোলার কাজ। তার চিকিৎসায় কতজন কতটুকু ভালো হয়েছে তিনি তা জানেন না। তবে কেউ এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি বলে দাবি করেছেন। দাঁত তোলার মতো একটা কঠিন বিষয়কেও তিনি অত্যন্ত সহজভাবে দেখেন বলে জানান, তার মতে এটা একটা হাতের ম্যাজিক।

তিনি আরও বলেন, যে কোনো দাঁত সহজেই উৎপাটন করা সম্ভব। তিনি রোগীদের এ্যানেসথেসিয়া ইনজেকশন প্রয়োগ করে দাত তুলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৬ বছর ধরে ডাক্তারি করে আসছি, এসব আমার জন্য কোনো বিষয়ই না।

শনিবার সাপ্তাহিক হাটের দিন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাজারের বিভিন্ন স্থানে মজমা বসিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন অনেকে। প্রকাশ্যে মাইক, সাউন্ড বক্স বাজিয়ে বিভিন্ন এ্যান্টিবায়োটিক, চর্ম, দন্ত ও যৌন উত্তেজক কিং পাওয়ার অয়েল, পাওয়ার সেক্স অয়েল, এনজয় পাওয়ার অয়েল, স্ট্রং পেইনস ম্যাসেজ অয়েল, পেইন আউট স্প্রে, ডি বাজিকরণ, ম্যাক্স জেড, এ্যাপেক্স, ভিগোসা, সেকলো, লুমিসেক, ডেফরল, ভিটামিন বি-৫০ ফোর্ট, ক্যালসিয়ম-ডি, ভারতীয় যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেনেগ্রা ও টার্গেট, জিনসীন প্লাস সহ নানা ধরনের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। আরো জানা যায়, ওষুধ বিক্রিতে অবলীলায় দেখানো হয় নানা অশ্লীল ছবি, সেই সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা। এতেই মজে গিয়ে অনায়াসে পকেটের সব টাকা দিয়েও ওষুধ কিনছেন অনেকে।

ঔষধ কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা বলেন, ফার্মেসিতে যে ওষুধের দাম ২০ টাকা সেটা এখানে ১০ টাকায় পাওয়া যায়। আমরা গ্রামের মানুষ, ওষুধ সম্পর্কে অতো বুঝি না। কম দামে পাওয়ায় আমরা এখান থেকে ওষুধ কিনি। সব ওষুধ দেখতে তো একই রকম, কিন্তু ফার্মেসিতে দাম বেশি। এসব ওষুধ ক্ষতিকর জানলে আগে কিনতাম না।

এ বিষয়ে লংগদু থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইকবাল উদ্দিন বলেন, আমরা জনস্বার্থে ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সকল অবৈধ, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি দমনে প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। লংগদুতে এধরনের কার্যক্রম চলমান থাকলে অতি শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাধারণ জনগণকে প্রতারিত করে বিভিন্ন ভেজাল ও ক্ষতিকারক ওষুধ বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে আইনানুগত ব্যবস্থার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সচেতন নাগরিকগণ বলেন, বিভিন্ন হাট-বাজার, পথে-ঘাটে ও ফুটপাতে দিনদিন বেড়েই চলেছে এসব অবৈধ ঔষধের ব্যবসা। এতে প্রশাসনের কোন ভূমিকা দেখি না। প্রশাসন যদি কোন পদক্ষেপ নিতো তাহলে জীবন রক্ষাকারী নিম্নমানের ঔষধ যত্রতত্র বিক্রি বন্ধ হতো। এসব বন্ধ না করলে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েই চলবে।

জীবন নাশকারী নিম্নমানের ওষুধ হাট-বাজার, পথে-ঘাটে ও ফুটপাতের যেখানে সেখানে বিক্রি বন্ধ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন এমন আশা করছেন স্থানীয়রা।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।