শিক্ষকদের বেতন বন্ধ, ব্যহত শিক্ষা কার্যক্রম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর ফয়জুলবারী ফাযিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় পাঁচ মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে ২৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীর। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় মাদরাসার সভাপতি অনুমোদন দিলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মনোনীত না হওয়ায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়। এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি বেতন বন্ধ থাকায় রমজান ও ঈদে মানবতার জীবন যাপন করছে প্রতিষ্ঠানটির ২৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার।

সরেজমিনে পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারীতে মাদ্রাসার নতুন পরিচালনা কমিটির অভিভাবক, দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা ক্যাটাগরিতে সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নীতিমালা অনুযায়ী সভাপতি নির্বাচনের জন্য কমিটির প্রথম সভা আহ্বান করবে অধ্যক্ষ বা সদস্য সচিব। কিন্তু ফয়জুলবারী মাদ্রাসায় কমিটির প্রথম সভা ছাড়াই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এডিসি (সার্বিক), এডিসি (শিক্ষা) ও এডিসি (রাজস্ব) তিনজনের নাম সভাপতি মনোনয়নের জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করে। যা কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও অবগত নয়। অপর দিকে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াছিনকে সভাপতি ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন চৌধুরীকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য করতে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি ডিও লেটার প্রেরণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তাদেরকে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারী সভাপতি ও বিদ্যুৎসাহী হিসেবে অনুমোদন দেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গত মার্চ মাসের শুরুতে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে। এসব জটিলতার কারণে গত নভেম্বর থেকে বেতন পাচ্ছেনা মাদ্রসার ২৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী।

সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সভাপতি যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি অনেক দানবীর ব্যক্তি। এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে তিনি জড়িত। উনার মত একজন ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ কেন মানতে নারাজ তা আমাদের বোধগম্য নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মান নষ্ট করার জন্য এসব কখনও কাম্য নয়।

স্থানীয় অভিভাবক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, শিক্ষকরা বেতন না পাওয়ার প্রভাব আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ওপর পড়েছে। অধ্যক্ষের রেষারেষির কারণে গত পাঁচ মাস ধরে মাদ্রাসায় লেখাপড়া হচ্ছেনা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা।

মাদ্রাসার শিক্ষক লুৎফুর করিম বলেন, ঈদের আগে বেতন না পেলে আমাদের পরিবারে ঈদ করা সম্ভব হবেনা। অধ্যক্ষের একগুয়েমি মনোভাবের কারণে মাদ্রাসায় সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। শিক্ষকরা পাচ্ছেন না বেতন। এতে করে লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান বলেন, নীতিমালা মতে আমি মাদ্রাসার সভাপতি মনোনয়নের জন্য তিনজনের নাম ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করি। কিন্তু স্থানীয় একটি গ্রুপ আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অন্য একজন ব্যক্তির নাম পাঠালে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি গভর্নিং বডির প্রথম সভা করেনি বলে স্বীকার করেন।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ফয়জুলবারী ফাযিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি পদে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় মোহাম্মদ ইয়াছিনকে মনোনয়ন দিয়েছে যা এখনো বলবৎ আছে। তাই ওই মাদ্রাসার বেতন-ভাতা সভাপতির স্বাক্ষরেই নিতে হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।