শিক্ষক সংকটে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ান মানবিকের শিক্ষক, নেই বাণিজ্য বিভাগ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটির লংগদু উপজেলার প্রাচীনতম বিদ্যাপিট লংগদু সরকারী উচ্চ বিদালয়। রয়েছে সুন্দর শিক্ষার পরিবেশ। যথানিয়মে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রাত্যহিক সমাবেশ ও ১০ টায় ক্লাস শুরু হয়ে বিকাল ৩ টায় ছুটি। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ৩ শতাধিক। বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা আছে; নেই শুধু শিক্ষক!

মানবিক বিভাগের শিক্ষক দিয়েই চলছে বিজ্ঞান শাখার পাঠদান। দেশের অন্যান্য সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৫-২৭ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পদ আছে মাত্র ৬টি। তাও আবার মানবিক বিভাগের। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সৃষ্ট পদ ৬টি থাকায় এর অধিক সরকারি শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। ৬টি পদের বিপরীতে সরকারি শিক্ষক কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। শিক্ষক সংককটের ফলে ব্যবসায় বিভাগ চালু করার সুযোগ হচ্ছে না স্কুল কর্তৃপক্ষের।

উপজেলার একমাত্র সরকারী বিদ্যাপীঠ এভাবে বিজ্ঞান বিভাগ ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষকের অভাবে।

লংগদু সরকারী উচ্চ বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক রাজীব ত্রিপুরা বলেন, ১৯৬৯ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৪ সালে জাতীয়করণ হয়। দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ীভাবে প্রধান শিক্ষক নেই, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলেছে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। সর্বশেষ আমি ২০১৭ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসি।
তিনি বলেন, বিষয় ভিত্তিক ৬টি শিক্ষক পদ থাকলেও প্রধান শিক্ষকসহ মাত্র ৩ জন সরকারি শিক্ষক আছেন। পাঠ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ৮ জন খন্ডকালীন (অতিথি) শিক্ষক দিয়ে চালাচ্ছি স্কুলের পাঠদান। তবে তাদের সম্মানী (বেতন-ভাতা) যথাসময়ে দিতেও হিমসিম খাচ্ছি।

তিনি বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। ইংরেজি শিক্ষক পদে দুইজন কর্মরত রয়েছে, গনিত, সমাজ বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান, বাংলা ১টি করে পদ শূন্য রয়েছে।

দীর্ঘদিন যাবৎ বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যতদ্রুত সম্ভব শূন্য পদে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক পদায়ন করা অত্যান্ত জরুরী।

১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আবিদুর রহমান জিহাদ বলেন, আমি লংগদু সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি হই। নবম শ্রেণিতে এসে বিজ্ঞান শাখা নিই। নবম শ্রেণি থেকে কোনো বিজ্ঞান বিভাগেরর শিক্ষক পাই নাই। বাংলা, সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক দিয়ে বিজ্ঞান শাখার ক্লাস করানো হয়; এতে করে আমরা পদার্থ, রসায়ন, জীব বিজ্ঞানসহ উচ্চতর গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালো করে বুঝতে পারি না। এধরনের পড়ালেখা করে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারব না। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবী করছি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক পদ সৃষ্টি করে বিদ্যালয়ে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক দেওয়া হোক।

মানবিক শাখার ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ব্যবসা শিক্ষা শাখা নেই। আর বিজ্ঞান শাখার কোন শিক্ষক নেই। বাংলা ও সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষকরাই মানবিক ও বিজ্ঞান শাখার ক্লাস নেন। আমাদের বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। ফলে ভালো কিছু করা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হবে।

৮ম শ্রেণির ছাত্র প্রাঙ্গন চাকমা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষক কম থাকার কারণে প্রতিদিন সবগুলো ক্লাস হয় না। আমাদের পড়ালেখায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমাদের দাবী সরকার যেন বিদ্যালয়ে খুব দ্রুত শিক্ষক দেন এবং প্রতিদিন সব ক্লাস নিয়মিত হয়।

অভিভাবক মো. আবুল কাশেম বলেন, সরকারি স্কুল দেখে ভালো পড়াশোনা হবে বলে ছেলেকে ভর্তি করেছি। কিন্তু এখানে শিক্ষক সংকটের কারণে ছাত্রছাত্রীরা তাদের মেধার সঠিক প্রয়োগ করতে পারছে না। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন এলাকার শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এবং শিক্ষার্থীদের আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করা হোক।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকিব ওসমান বলেন, আমি লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরির্দশন করেছি, শিক্ষক সংকট বিষয়টা অবগত হয়েছি। স্কুলের অবকাঠামো গত উন্নয়নে নিয়মিত ক্লাস চালু রাখতে পরামর্শ দিয়েছি। এবিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি শূন্য পদে শিক্ষক আসা সময় সাপেক্ষ, আপাতত খন্ডকালীন শিক্ষক যারা আছেন তাদের যেন মানসম্মত বেতনের ব্যবস্থা করা যায় সেই লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে আমি চেষ্টা করছি।

লংগদু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, লংগদু সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। সরকারি ৬ জন শিক্ষকের পদে মাত্র ৩ জন শিক্ষক কর্মরত আছে। খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। বিজ্ঞান শাখার কোন শিক্ষক নাই। এ কারণে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার অনেক সমস্যা হচ্ছে। সরকার একাডেমিক ভবন ও ছাত্রাবাস করে দিচ্ছেন কিন্তু শিক্ষক দিচ্ছেন না। আমি আশা করি সরকার এবিষয়টায় গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মান বজায় রাখবেন। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।