সন্ত্রাসী ম্যাক্সনের লাশের গন্তব্য শ্মশান নাকি কবর?

চট্টগ্রাম পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরনবী ম্যাক্সন নাম বদলে, ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে পশ্চিম বঙ্গে বসবাস করছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের ‘স্বাস্থ্য সাথী’ কার্ড চট্টগ্রাম খবরের হাতে আসছে। তাতে ম্যাক্সনের নাম তমাল চৌধুরী লিখা রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার জাহানপুর এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে নুরনবী ম্যাক্সনই ভারতে তমাল চৌধুরী নামে বসবাস করতো।
সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠছে তার লাশ তমাল চৌধুরী হিসেবে শ্মশানে দাহ করা হবে নাকি বাংলাদেশে এনে দাফন করা হবে?

এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, সন্ত্রাসী ম্যাক্সনের পরিবারের চাওয়ার ওপর নির্ভর করবে। তারা যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করে তবে ভারত সরকার তার লাশ হস্তান্তরের আইনি সুযোগ রয়েছে। কারণ তাকে জীবিত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আমরা করেছি। এছাড়াও ভারতে অনুপ্রবেশ, বেআইনিভাবে বসবাস এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরির অভিযোগে বারাকপুর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সে দেশের পুলিশ।

পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই নুরুল ইসলাম সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামী থানায় যোগাযোগ করেছে জানিয়ে ওসি বায়েজিদ ফেরদৌস জাহান বলেন, ম্যাক্সনের মৃত্যুর বিষয়টি তার ভাই নুরুল ইসলাম থানায় এসে জানিয়েছেন। তিনি ভাইয়ের লাশ দেশে আনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা আইনি গাইড লাইন দিয়েছি। বাকিটা ওদের বিষয়।

শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. নুরনবী ম্যাক্সন মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাতে ভারতে মারা যায়। পলাতক এই সন্ত্রাসী এর আগে গত ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণার বারানগর থানার ডানলপ এলাকা থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে আলোচনায় আসে। ভারতে সে ছদ্মবেশে কখনো রঙমিস্ত্রি, কখনো মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতো।

হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ২২ মামলার আসামি ম্যাক্সনকে বাংলাদেশ পুলিশ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। ম্যাক্সনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হলেও মৃত্যুর কারণ একাধিক সূত্র ভিন্ন ভিন্ন কারণ বলছে। একটি সূত্র বলছে নারীঘটিত কারণে ম্যাক্সনকে খুন করা হয়েছে। আরেকটি সূত্র বলছে ম্যাক্সন আত্মহত্যা করেছে।

চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে মানিকজোড় হিসেবে পরিচিত ম্যাক্সন ও সারোয়ার ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে কাতার চলে যায়। কাতারে বসে দেশীয় অনুসারীদের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো। কাতারে মারামারিতে জড়ালে সে দেশের পুলিশ তাদের কাতার থেকে বের করে দেয়।
২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কাতার থেকে দেশে ফিরে আসলে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হয় সারোয়ার। তবে ম্যাক্সনের অবস্থান ছিল রহস্য ঘেরা। অবশেষে গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তার হওয়ায় তার অবস্থান সনাক্ত হয়।

চট্টগ্রামের আলোচিত তিন পুলিশ অফিসার মহিউদ্দীন সেলিম (সাবেক ওসি কোতোয়ালী), মো. কামরুজ্জামান (সাবেক ওসি বায়েজিদ) ও জহির হোসাইনের (সাবেক ওসি আকবরশাহ) নেতৃত্বে ২০১১ সালের ৬ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ম্যাক্সন ও সারোয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই সময়ে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে গিট্টু মানিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে একে-৪৭ রাইফেল ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।