সন্ধ্যায় ঘোষণা দিয়ে ভোররাতে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন—৪ খুনি র‌্যাবের জালে

কথা-কাটাকাটির জের ধরে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীর নয়াবাজার এলাকায় আজাদুর রহমান (৩০) নামে এক যুবককে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাতে খুনের ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—নগরীর হালিশহরে মো. আবুল হাসেমের ছেলে আবু তাহের রাজীব (২৩), লক্ষীপুর সদরের সংসেরাবাদ এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন জয় (২৭), হালিশহরের মো. ইব্রাহিমের ছেলে মো. রায়হান সজীব, নয়াবাজার এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে আবুল হাসনাত রানা (৩০)। র‌্যাবের দাবি, তারা আজাদ খুনে সম্পৃক্ত বলে প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

সোমবার (২৯ মে) রাঙামাটি জেলার সদর থানাধীন একটি আবাসিক হোটেল এবং নগরীর কদমতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করার বিষয়টি চট্টগ্রাম খবরকে নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব৭-র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো. নূরুল আবছার।

তিনি বলেন, শনিবার (২৭ মে) রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার সময় সময় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি নগরীর নয়াবাজার এলাকার একটি কারখানার গেইটের সামনে প্রস্রাব করলে কারখানার নৈশ প্রহরী নিহতের বড় ভাই মফিজ (৪০) তাকে বাধা প্রদান করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ব্যক্তি নৈশ প্রহরী মফিজকে বলে, এটা সরকারি জায়গা তুই বাধা দেওয়ার কে? আর এমন এই বিষয় নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আসামি আবু তাহের রাজীব, ওসমান, আবুল হাসান এবং আরও কয়েকজন ওই স্থানে গিয়ে কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। এদিকে বড় ভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটির শব্দ শুনে নিহত আজাদুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে তার সাথেও কথা কাটাকাটি এবং এক পর্যায়ে ধাক্কা-ধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আসামিরা ভুক্তভোগীকে দেখে নিবে বলে হুমকি প্রদান করে চলে যায়।

এই ঘটনার জের ধরে ভোরের আলো ফোটার পরপরই ভিকটিম আজাদুর রহমান দোকান থেকে নাস্তা আনার জন্য বাসা থেকে বের হন। পাহাড়তলী থানাধীন নয়াবাজার পৌঁছালে ওঁৎ পেতে থাকা আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভুক্তভোগীকে একা পেয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলাপাথাড়িভাবে পেটে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় ভুক্তভোগীকে ফেলে তারা পালিয়ে যায়। ছুরিকাঘাতের ফলে ভুক্তভোগীর পেটের ভুড়ি বের হয়ে যায়। ভুক্তভোগীর চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পরে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর হতে আসামিরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। আজ পলাতক স্থান থেকে তাদের ৪ জনকে আটক করে র‌্যাব।

এদিকে ভুক্তভোগীকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মুমূর্ষ অবস্থায় তার ভাতিজা তারেকুর রহমানের নিকট আক্রমণকারীদের নাম প্রকাশ করেন। ভুক্তভোগী মৃত্যুর পূর্বে আরও বলে যান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলাপাথাড়িভাবে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেছে।

র‌্যাব ৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নূরুল আবছার আরও বলেন, গোয়ান্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।