সাউদার্ন মেডিকেলের ৩ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগী মেরে ফেলার অভিযোগ

চট্টগ্রামে সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় পপি আক্তার নামে এক গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে । এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মীর আবদুল পিরু চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৫ আদালতে এক অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) এ অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারক মো. সাদ্দাম হোসেন ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের আদেশ দেন।

অভিযুক্ত চিকিৎসকরা হলেন—সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ ইমরান হোসেন (৪৫), সহকারী অধ্যাপক ডা. আদনান বাচা (৪০) ও অধ্যক্ষ ডা. জয়ব্রত দাশক (৫৫)।

অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২২ অক্টোবর সকালে আমার স্ত্রী পপি আক্তার পেটের ব্যথা অনুভব করলে বাসার পাশের সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা শনাক্ত করেন এবং অতি দ্রুত অপারেশন করতে বলেন।

গত ২৬ অক্টোবর সকাল ৯টায় রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন ঘণ্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে চার নম্বর ওয়ার্ডে আনা হয়।

ওয়ার্ডে আনার পর সারাদিন পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে এবং রক্তপাত হয়। তখন অবস্থা খারাপ হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। পরে ওই দিন রাত ১১টার দিকে পুনরায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় দ্বিতীয়বার অপারেশন করা হয়। দ্বিতীয় বার অপারেশনের পর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হয়, প্রেশার কমে যায় এবং রেসপন্স তেমন একটা ছিল না।

পরদিন ২৭ অক্টোবর সকালে ডিউটি ডাক্তার জানায়, রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ। তড়িঘড়ি করে ডিসচার্জ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আমি তখন দ্রুত পাশে অবস্থিত মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ অক্টোবর সকাল ৬টা ৫৪ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিষয়টি সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষকে জানালে তিনি ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তবে কমিটি কোন প্রতিবেদন না দেওয়ায় খুলশি থানায় মামলা করতে গেলে থানার ওসি মরদেহ দাফনের কথা বলায় সরল বিশ্বাসে নিজ বাড়ি কুমিল্লায় মরদেহ দাফন করা হয়। পরে খুলশি থানায় আবার মামলা করতে গেলে মামলা না নেওয়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৫ আদালতে এই অভিযোগ দায়ের করেন বাদী।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হেলাল বলেন, সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুতে এ অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগটি গত ১৮ ডিসেম্বর দেওয়া হয়। আজ অভিযোগ আমলে নিয়ে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এদিকে নিহতের স্বামী মীর আবদুল পিরুর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের ভুল এবং অবহেলায় নিহতের মৃত্যু হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসমপাতালের অধ্যক্ষকে আদেশ দিয়েছেন আদালত। সেইসাথে তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধানকে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে মেডিসিন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগ থেকে দুইজন রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা সহকারী অধ্যাপকের নিম্ন মানের নয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।