সিআরবিতে হাসপাতাল— প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হবে

কালুরঘাট সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশার কাজ চলছে

রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বর্তমানে সরকারের নীতি হলো ৩০ শতাংশ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপের (পিপিপি) আওতায় সম্পন্ন করা। সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। এই কমিটি মাঠ পর্যায়ে কাজ শেষের পর এখন অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ আসছে। এ বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে যাই হোক না কেনো, আলোচনা চলছে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিআরবি পুরাতন রেলস্টেশনের পাশে প্রস্তাবিত কল্যাণ ট্রাস্টের জায়গা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব জমিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় সিআরবি সংলগ্ন ছয় একর জমিতে নির্মিতব্য প্রকল্পটির নাম রাখা হয়েছে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স।

এ খবর জানাজানির পর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন সুশীল সমাজের পেশার প্রতিনিধিরা আন্দোলনে নামেন। এই আন্দোলনে শরীক হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিমসহ মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে গেল ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম সফরে আসেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ করা হবেনা বলে জানান তিনি।

এদিকে গত মাসে সিআরবির তিন প্রবেশ মুখে গেট বসায় রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ। ফলে আবারও সিআরবিতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

নভেম্বরে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রেলমন্ত্রী বলেন, আমরা তো জনগণের জন্যই হাসপাতাল করছি। জনগণ বলতে আমরা কি বুঝব সেটা আপেক্ষিক বিষয়। এখানে অনেক মন্ত্রী, এমপিসহ বহু জনপ্রতিনিধিরা আছেন। তারা না চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে যাবে না। আমাদেরও প্রয়োজন নেই।

রেল নিয়ে বিগত সরকারের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, সরকার নিজে ব্যবসা করে না। সরকারের নীতি হলো যারা ব্যবসা করছেন তাদের সহায়তা করা। যেটা আমাদের উন্নয়নের কাজে আসলো না তাদের আটকে রেখে লাভ নেই। অনেকে রেলেও জায়গা দখল করে বসে আছে। আগে রেলের প্রতি এত দৃষ্টি ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সড়কপথ, রেলপথ, আকাশপথ সমন্বিত করে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলছেন। দেশের উন্নয়ন সম্ভাব্য সবকিছু আমাদের ব্যবহার করতে হবে।

এর আগের সরকারগুলোর পলিসির কারণে রেলপথ পিছিয়ে গেছে। উন্নয়নের ধারায় রেলপথ যেভাবে থাকার কথা ছিল সেভাবে থাকেনি। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী আলাদা মন্ত্রণালয় করে নতুন করে বিনিয়োগ করে রেলওয়েকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলেছেন বলেও জানান মন্ত্রী।

কালুরঘাট রেল সেতু সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, কালুরঘাট রেল সেতুর বর্তমান উচ্চতা ৪.৬ মিটার। এতে ঠিকঠাক নৌ-যান চলাচল করতে পারবে না। তাই নৌ-যান চলাচলের জন্য এটি ১২.২ মিটার উচ্চতায় নির্মাণ করতে হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশার কাজ চলছে।

এসময় রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সিআরবিতে হাসপাতালের নির্মাণের বিরোধীতা করে আন্দোলন করছে সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলসহ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতৃবৃন্দ এবং চট্টগ্রামের প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবী সিআরবিতে বঙ্গমাতার নামে হাসপাতাল নয়, উদ্যান গড়ে তোলা হোক।

সিএস/এফএম

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।