সিইউএফএলের বন্ধ কারখানায় নেই বিষক্রিয়া—দাবি কর্তৃপক্ষের

‘কারখানার চারপাশে গবাদি পশুর বিচরণ নিষিদ্ধ’ সাইনবোর্ড টানানোর পরও গোবাদিয়া এলাকার চরণভূমিতে গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ‘গত তিনমাস ধরে কারখানা বন্ধ রয়েছে। পানিতেও কোন বিষক্রিয়া নেই’ এমন দাবি করে কারখানা কর্তপক্ষ বলেন, পশু মৃত্যুর সাথে কারখানার বর্জ্যের কোন সম্পর্ক নেই।

তবে গত এক বছরে ৩৭টি পশু মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগের তীর বরাবরই চিটাগাং ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এর দিকে তাক করছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ কারখার বর্জ্য মিশ্রিত বিষাক্ত পানি পান করে পশুগুলো মৃত্যু হয়েছে। ২০২২ সালের ১৪ এপ্রিল ১২টি, ২৪ এপ্রিল ১৩টি, ৯ মার্চ ১২টি গবাদি পশু ও একই বছর ১৩ জুলাই ১০টি মাছের ঘেরের সবগুলো মাছ মারা যায়। যার মধ্যে গত ডিসেম্বরে ১২টি মহিষের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত গবাদি পশুর মালিকরা।

গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় সিইউএফএল গোবাদিয়া এলাকার চরণভূমিতে আরও ১২টি মহিষ মৃত্যুর পর প্রথমবারের মত মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করতে পোস্টমর্টেমের ব্যবস্থা করেন কর্তৃপক্ষ। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয় সচেতন মহলের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষতিপূরণ ও গবাদি পশুর মৃত্যুর রহস্য নিয়ে নানা আলোচনা ও সমলোচনা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ও ডাই-অ্যামেনিয়া ফসফেট (ডিএপি) ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিটেডের বর্জ্য শোধন ব্যবস্থা থাকলেও তা না করে সরাসরি খালে ফেলায় খালের পানি বিষাক্ত হয়ে যায়। যা পান করে হরহামেশাই গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। স্থানীয় কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায় সারছেন কর্তৃপক্ষ।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঘটনাস্থলে গিয়ে পশু গুলোকে পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। এখন রির্পোটের অপেক্ষায় রয়েছি। রির্পোট না আসা পর্যন্ত কোনো কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন পশুর শরীরে বিষক্রিয়া হওয়ার কারণে মৃত্যু ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।

স্থানীয় চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ূম শাহ্ বলেন, কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যেগুলোর কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে গবাদি পশু, মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আসছে। কর্তৃপক্ষ প্রথমে অস্বীকার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের হয়রানী করে ক্ষতিপূরণ দেন। এবারও তাই করছে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে। বিভিন্ন সময়ে মৃত পশু গুলো নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা বিক্ষোভও করে গেইটের মূল ফটকে। ক্ষতিগ্রস্তরা ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয়ের কাছে যাবেন।

তিনি আরও বলেন, সিইউএফএল কারখানার এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) সম্পূর্ণ অকার্যকর। বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস ছাড়ার সময় স্থানীয়দের অবগত করে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বারবার গরু মহিষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই দায় কর্তৃপক্ষ এড়ানোর কোন সুযোগ নেই।

চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানী সিইউএফএল অতিরিক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক (বন) ও বিভাগীয় প্রধান টেকনিক্যাল মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ্ জানান, সিইউএফএল নির্গত বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের বর্জ্য জল শোধন প্রক্রিয়া করার জন্য কারখানার এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) রয়েছে। এর মাধ্যমে কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য জল শোধন করা হয়।

তিনি আরও জানান, গ্যাস সংকট ও মেরামতের কারণে কারখানাটি বছরে দুই-তৃতীয়াংশ সময় বন্ধ থাকে। গত ২২ নভেম্বর প্রাইমারী ওয়েস্ট হিট বয়লারের যান্ত্রিক ক্রটির কারণে কারখানাটি উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকাকালীন সময়ে কোন ধরণের বর্জ্য নিসৃত হয়না। এরমধ্যে সর্বশেষ ১২টি গবাদি পশুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত গবাদি পশুর মালিকরা।

এদিকে সিইউএফএল তিনমাস ধরে বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে ডাই-অ্যামেনিয়া ফসফেট (ডিএপি) ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিডেট। এ কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসক) আবদুল জলিল জানান, তাদের কারখানা থেকে যে পানি বের হয় তাতে পশুর মৃত্যুর সম্ভবনা নেই। তারপরও মৃত পশুগুলো পোস্টমর্টেম করার পরই জানা যাবে মৃত্যুর আসল রহস্য। আমাদের কারখানায় পানির কারণে মৃত্যু প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।