সুখ বিলাসের হাছান, নেত্রীর ছায়াসঙ্গী—আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড

পাহাড়-নদী বেষ্টিত চট্টগ্রামের শান্ত গ্রাম রাঙ্গুনিয়ার সুখ বিলাস। ‘সুখ বিলাসের আলো’ খ্যাত মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রথিতযশা আইনজীবী নুরুচ্ছফা তালুকদার আর অধ্যাপক কামরুন নাহার বেগমের ঘর আলোকিত করে ১৯৬৩ সালের ৫ জুন জন্ম নেন মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ। ঝর্ণার মতো চঞ্চল হাছান জ্ঞান, দায়িত্ব জ্ঞান, কর্ম পরিধি বাড়ার সাথে সাথে হয়েছেন পাহাড়ের মতো ধীর-স্থির। বিশ্বাসের জায়গায় শিখে গেছেন জীবন বাজি রাখতে। নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে নেত্রীর জন্য মানব ঢাল তৈরি করা হাছান এখন নেত্রীর ছায়াসঙ্গী। দলের দুঃসময়ে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা রাখা এই নেতা এখন ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

২১ আগস্ট ২০০৪, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ দলের ২৪ জন নেতা–কর্মী নিহত হন। ঘাতকদের টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু নেতাকর্মীদের মানবঢাল সেদিন প্রাণে বাঁচিয়ে দিয়েছিল আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সেই মানবঢালে থাকা হাছান এখনও গ্রেনেডের ৪০টি স্প্রিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন।

বলছিলাম সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির কথা। শুধু রাজপথে জীবন বাজি রাখা নয় ১/১১ সরকারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন কারাবন্দি শেখ হাসিনার শারীরিক খবরা খবর, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের আপডেট গণমাধ্যমে উপস্থাপন করতেন ড. হাসান মাহমুদ। এখনও বিরোধীদের নানা অপপ্রচার, দলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গণমাধ্যমে উপস্থাপনে তিনিই বিশ্বস্ত ব্যক্তি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তৎকালীন প্রচার সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ। আর সদ্য সমাপ্ত ২২তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল শেষে তাঁকে ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দলের এটিই চট্টগ্রাম থেকে শীর্ষ পদ। দল পরিচালনায় দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের পরই তার অবস্থান।
চট্টগ্রাম থেকে ইতোপূর্বে অনেকেই সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হয়েছেন, হয়েছেন উপদেষ্টাও। কিন্তু দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ২৪ ঘন্টা ছুটে বেড়ানো হাছান মাহমুদ এর বাইরে পালন করছে দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হিসেবেও।

সুখ বিলাসের হাছান, নেত্রীর ছায়াসঙ্গী—আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড 1
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ড. হাসান মাহমুদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে

রাজনৈতিক জীবনে ড. হাছান মাহমুদ ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম নগরে ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত তৎকালীন সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮৮ সালে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব অর্পিত হয় তার ওপর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিষয়ে স্নাতক এবং ১৯৮৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। তিনি ২০০১ সালে বেলজিয়ামের লিম্বুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ রসায়ন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এর আগে ১৯৯২ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি বেলজিয়ামে অবস্থানকালে সেখানকার আওয়ামী লগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সালের মার্চ পর্যন্ত বেলজিয়াম শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ড. হাছান ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী এবং ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দলটির পরিবেশ ও বন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বর্তমানে সরকারের তথ‍্য ও সম্প্রচার মন্ত্রাণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এরপূর্বে তিনি বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারেরমত আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চট্টগ্রাম-৬ আসন থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে লক্ষাধিক ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, একই বছরের ১ আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

সুখ বিলাসের হাছান, নেত্রীর ছায়াসঙ্গী—আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড 2
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে ড. হাছান মাহমুদ

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় তিনি তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ভূমিকার জন্য ৫ অক্টোবর ২০১৫ সালে “গ্রিন ক্রস ইন্টারন্যাশনাল” সাধারণ অধিবেশনে হাসান মাহমুদকে “সার্টিফিকেট অব অনারেবল মেনশনে” ভূষিত করে। তিনি জাহাঙ্গনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও পাঠদান করেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।