স্বপ্ন অধরা রেখেই ৭ পরীক্ষার্থী আজ শুধুই ছবি, সাথে শিক্ষকরাও

কেউ এসএসসি পরীক্ষার্থী—কেউবা এইচএসসি। স্বপ্ন সকলের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরিবারের হাল ধরা। বাপ-মা বুনছেন হাজারো স্বপ্ন। সাত শিক্ষার্থীর সবাই এক সাথে মারা গেলেন। তাদের সাথে চলে গেলেন তাদের তিন শিক্ষকও।

শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে সাত শিক্ষার্থীসহ ১১ জনের হয়েছে মর্মমান্তিক মৃত্যু। তাদের এই অকাল প্রয়াণে চট্টগ্রামের হাটহাজারী আমানবাজারের যুগীরহাটে চলছে শোকের মাতম। বাড়ীতে বাড়ীতে আহাজারি। এমন ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে যেন নেমে এসেছে ঘোর অমানিশার অন্ধকার।

এই ঘটনায় নিহতরা হলেন- মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬), শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসান (১৯), মোসহাব আহমেদ (১৬), মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯), ইকবাল হোসেন মারুফ (১৯), মাহিন (১৭), আয়াতুল ইসলাম (১৮), সাগর (১৮), শিক্ষক জিয়াউল হক সজীব (২২), ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৩), রেদওয়ান চৌধুরী (২২)।

শিক্ষক জিয়াউল হক সজীবের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, দুইদিন আগে এসএসসি ও এইচএসসি বিদায়ী পরীক্ষার্থীদের নিয়ে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণায় প্রাকৃতিক নৈসর্গ উপভোগ করার পরিকল্পনা করা হয়। নিহত তিন শিক্ষক যুগীরহাট কলেজে রোডের শেখ মার্কেটে আর এন্ড জে প্রাইভেট কেয়ার নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতেন। নিহত শিক্ষার্থী সকলে ওই কোচিং সেন্টারের ছাত্র।

শুক্রবার ভোর ৬টায় তারা মাইক্রোবাস যোগে খৈয়াছড়া ঝর্ণার উদ্দেশ্য রওয়ানা করেন। পরিদর্শন শেষে দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে নিজ গন্তব্যে রওয়ানা করেন। ফিরতি পথে মিরসরাইয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম রেল লাইনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতী ট্রেনের সাথে সংঘর্ষে হয়। এসময় ট্রেন মাইক্রোবাসটিকে ঠেলে এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়।

জিয়াউল হক সজীবের চাচা আব্দুল খালেকের আহাজারি যেন থামছেই না। বিলাপ করতে করতে তিনি বলতে থাকেন, আমার ভাইফুত সংসারের হাল ধরতে চাইছিলো। ছোট্ট একটা কোচিং সেন্টার দিয়া তিন বন্ধু মিলে শুরু করছিলো। ভাইফুত নিজেও তো ছাত্র। এমইএস কলেজে অনার্সের পড়ে। তোঁয়ারা আর ভাইফুতরে আনি দ’।

এদিকে মাইক্রোবাস চালক নিরুর বাড়িতে আরেক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। নিরুর স্ত্রী, মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ ছিলো গগনবিদারী। নিরুর ৭ সাত বছর বয়সী একটি শিশু কন্যা রয়েছে। তার নাম নওরীন তাবাসসুম রুহি। বয়স অল্প হলেও পড়াশোনায় আগ্রহ থাকায় বাবা তাকে খন্দকিয়া সমদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এই প্রতিবেদক রুহির সাথে কথা বলেছেন। রুহীর কাছে তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে রুহী বলেন, বাবা এক্সিডেন্ট করেছে। লাশ এখন থানায়। এই কথা বলে চলে যান ঘরে।

নিহত স্বজনদের প্রতীক্ষা কখন প্রিয় সন্তানের মরদেহ তাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে। সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে অতিদ্রুত লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার আবেদন জানিয়েছেন স্বজনরা।

আরও পড়ুন:
ট্রেনের ধাক্কায় চট্টগ্রামে ১১ পর্যটক নিহত
মিরসরাই ট্যাজেডি—গেটম্যান সাদ্দাম আটক, গেটম্যান ও গেটবার নিয়ে দু’রকম তথ্য

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।