স্বল্প ব্যয়, আধুনিক মান—উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে মালেশিয়ায়

ইউরোপের দেশগুলোর মতো উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের সারিতে প্রথমদিকে উঠে আসছে মালেশিয়া। দেশটির উন্নত এবং আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে মালয়েশিয়া আজ বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে এবং নিজের সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্বের দরবারে। মালয়েশিয়ার সামাজিক, অর্থনৈতিক কাঠামো দৃঢ় এবং উন্নত। বর্তমানে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাচ্ছে মালেয়েশিয়ায়। স্বল্প ব্যায় আর উচ্চ মানের কারণে বলা যায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে মালেশিয়ায়।

যে কারণে মালেশিয়ায় উচ্চশিক্ষা

বিশ্বমানের শিক্ষা: মালেশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে সমস্ত ডিগ্রী দিয়ে থাকে তা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং ২০২৩ অনুসারে দেশটির ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ ৬শতে আছে। ২০২২ সালে র‌্যাংকিং হিসেবে দেশটির ১০টি বিষয় শীর্ষ ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান পেয়েছে।

স্বল্পব্যয়: মালেশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খরচ তুলানামূলক কম হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সহজেই এখানে ভর্তি হতে পারেন। ইউরোপের দেশের তুলনায় এখানে খরচ অনেকটা কম। মালয়েশিয়ায় টিউশন ফি ৪ হাজার ৫০০ থেকে ২৫ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার রিঙ্গিত হয়ে থাকে। এছাড়া এই দেশে কিছু সরকারি ও বেসরকারি স্কলারশিপ আছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব কিছু ডিসকাউন্টও আছে।


আধুনিক এবং প্রগতিশীল:
মালয়েশিয়া একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং মুসলিম-বান্ধব দেশ হিসাবে সুপরিচিত। যেখানে সহজে হালাল খাবার এবং আধুনিক জীবন যাপনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। দেশটির আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, সড়ক, রাস্তাঘাট, আবাসন সব কিছুই শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়।

অবস্থান-নিরাপত্তা: মালয়েশিয়া একটি এশিয়ার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এখানে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান। যা পা্রতিনিয়ত পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার বিরতিতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবে। মালয়েশিয়ায় নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত মানুষ বসবাস করে। ২০২০ সালের বর্তমানে গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনডেক্স রিপোর্টের ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশের মধ্যে ২০তম স্থানে রয়েছে মালেশিয়া। যা পড়াশোনা থাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় পাওয়া হতে পারে।

গতিশীল জীবনধারা: অনেক আন্তর্জাতিক ছাত্র মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে পছন্দ করেন কারণ তারা এখানে নিজের চিন্তাধারাকে প্রসার করতে পারেন। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আধুনিক এবং বাস্তবধর্মী পাঠদান হয়ে থাকে। এখানে বহু সংস্কৃতির মানুষ বসবাস করে। মালয়েশিয়ার ল্যান্ডস্কেপ বৈচিত্র্যময়, আদিম সমুদ্র সৈকত উপকূলে জীববৈচিত্র্য-সমৃদ্ধ রেইনফরেস্ট উপদ্বীপ এবং পূর্ব মালয়েশিয়ায় অনেক অ্যাডভেঞ্চারের জায়গা রয়েছে। রঙিন প্রবাল প্রাচীর, মাছ এবং অন্যান্য বিরল সামুদ্রিক বাসিন্দা এবং মাউন্ট কিনাবালু, সাবাহের মতো অত্যাশ্চর্য দৃশ্য সহ পর্বতমালার বিস্ময়কর সৌন্দর্যসহ মালয়েশিয়ার সুন্দর দ্বীপগুলোকে সমৃদ্ধ করেছে।

স্বল্প ব্যয়, আধুনিক মান—উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে মালেশিয়ায় 1

মালয়েশিয়া পড়তে যাবার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা

ডিপ্লোমা কোর্স: ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য নূনতম উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। এটি শেষ করতে ২ থেকে ৩ বৎসর সময় লাগে।

আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স: আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সের জন্য ন্যূনতম ১২ বৎসরের পূর্বতন শিক্ষা অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের শিক্ষা। এটি ৩ থেকে ৫ বৎসর মেয়াদী।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী: পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য ন্যূনতম ১৬ বৎসরের পূর্বতন শিক্ষা অর্থাৎ ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী। এটি ১.৫ থেকে ২ বৎসর মেয়াদী।

ডক্টরাল (PhD) ডিগ্রী:ডক্টরাল (PhD) কোর্সের জন্য পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী এবং ব্যাপক গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা দরকার হয়। এটি ৩-৫ বৎসর মেয়াদী।

ভর্তির আবেদন-প্রক্রিয়া

মালয়েশিয়ায় বছরে তিনটি সেমিস্টার পড়ানো হয়। প্রথম সেমিস্টারটি চলে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। দ্বিতীয় সেমিস্টারটি চলে মে থেকে আগস্ট। আর বছরের তৃতীয়টি বা বছরের শেষটি হল সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। অন্যান্য অনেক দেশের মত এই দেশে ভর্তি হতে কোন পরীক্ষায় বসার দরকার নেই। আবেদনের শুরুতেই আপনার কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করা। সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হলে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হবে। অন্যদিকে যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে অনেক কম সময় লাগবে।

সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় একটি অফার লেটার ইস্যু করে আর সেটা পাঠিয়ে দেয় এডুকেশন মালেশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেসে (ইএমজিএস) একটি এপ্রুভ লেটার দেয়। মালায়েশিয়ার কোন বিশ্ববিদ্যালয় ইমিগ্রেশনের সাথে সরাসরি কাজ করতে পারে না। তাই তারা শিক্ষার্থীদের সকল কাগজ পাঠিয়ে দেয় ইএমজিএস-এ। প্রতিষ্ঠানটি সকল ডকুমেন্টস ভেরিফাই করে সত্যতা যাচাই করে পাঠিয়ে দেয় ইমিগ্রেশনে। ইমিগ্রেশন একটি এপ্রুভাল লেটার প্রদান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সেই এপ্রুভাল লেটার সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

মালেশিয়ার সেরা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়

মালেশিয়ায় বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে থাকে। তার মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত ১৭টি মালেশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় হলো- এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন (এপিইউ), টুংকু আব্দুল রহমান ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি (টিএআর ইউএমটি), সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, কোলেজ প্রফেশনাল বাইতুমাল কুয়ালালামপুর (কেপিবি-কেএল), সেগি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ, পেনিনসুলা কলেজ, ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ এভিয়েশন মালয়েশিয়া, কলেজ এমডিআইএস মালয়েশিয়া, ওপেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি জিওমাটিকা মালয়েশিয়া (ইউজিএম), টেলর বিশ্ববিদ্যালয়, মাশা বিশ্ববিদ্যালয়, লিমককউইং ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম), জিয়ামেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া, ইউনিটার আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া কেলান্টান (ইউএমকে)।

স্বল্প ব্যয়, আধুনিক মান—উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে মালেশিয়ায় 2

উচ্চশিক্ষা প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে ইএমজিএস

মালেশিয়ার উচ্চশিক্ষা প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে এডুকেশন মালেশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেস (ইএমজিএস)। মালেশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি দেশটির শিক্ষাখাতের প্রচার-প্রসার এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য সরবরাহ, অপার লেটার প্রাপ্তি, ভিসা প্রসেসিংসহ যাবতীয় সব কাজ করে যাচ্ছে ইএমজিএস।

বুধবার (২৪ মে) চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল পেনিনসুলায় ইএমজিএসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় মালেশিয়ায় উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মেলা। মেলায় চট্টগ্রাম খবরের সাথে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির রিজিওনাল মার্কেটিং ম্যানেজার মি. মঈনের। তিনি বলেন, ২০১২ সালের ১৩ এপ্রিল ইএমজিএসের যাত্রা শুরু হয়। শুরু থেকেই আমরা মালেশিয়ার উচ্চশিক্ষা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মালেশিয়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহ দেখেছি, তাই এখানে আমাদের কার্যক্রমও বেশি হয়। আমরা আজকে চট্টগ্রামে এসেছি ঢাকায়ও আমাদের উচ্চশিক্ষা মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এখানে শিক্ষার্থীদের থেকে প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরাও মুগ্ধ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দেখে।

তিনি বলেন, আমরা শুধু বাংলাদেশে নয় পুরো বিশ্বে মালেশিয়ার শিক্ষা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ওয়ান-স্টপ-সার্ভিসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রসেসিংয়ে কাজ করে থাকি। মালেশিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৮৮টির বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু সরকারি আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তরাজ্য, চায়নাসহ বাইরের দেশে শাখা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মালেশিয়ায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী। আমাদের দেশের বিদেশি শিক্ষার্থীদের তালিকায় সবার ওপরে থকে বাংলাদেশের নাম। কোন কোন বছর এটি টপ পজিশন হোল্ড করে আবার কোন কোন বছর সেরা ৫ এর মধ্যে থাকে। সাউথ এশিয়ার মধ্যে মালেশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রথমে রয়েছে। মালেশিয়ায় এখন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। প্রতিবছর ৩-৪ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মালেশিয়ায় পড়াশোনা করতে যায়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।