হাইড্রলিক হর্ন বন্ধ করুন; শব্দ দূষণ বন্ধ করুন

সড়কে চলছে যানবাহন।ছোটাছুটি করছে মানুষ। এরমাঝে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে আছেন একজন। এক পাশে বসা তার মেয়ে অন্য পাশে ছেলে। প্ল্যাকার্ডে লিখা আছে— ‘হাইড্রলিক হর্ন বন্ধ করুন;শব্দ দূষণ বন্ধ করুন!’ এ শহরকে শব্দাস্ত্র থেকে বাঁচাতেই তাদের বাবা-সন্তানের এমন লড়াই।

বলছিলাম চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগির পাহাড় মোড়ে শব্দদূষণ বন্ধের দাবিতে অনশনে বসা সুজন বড়ুয়ার কথা।আর তার পাশে রয়েছে দুই সন্তান মেয়ে চন্দ্রিমা বড়ুয়া ও ছেলে অভিষেক বড়ুয়া। বাবার মতো তারাও প্ল্যাকার্ড হাতে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।

শব্দদূষণ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার সুজন বড়ুয়া চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য কেনাবেচার কাজ করেন। নগরে শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে গত ২১ জুলাই থেকে কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। ইতিমধ্যে পালন করেছেন ২১টি সচেতনতামূলক কর্মসূচি। এবার চেরাগি পাহাড় মোড়ে বসেছেন অনসনে।বুধবার(৫অক্টোবর) ছিলো অনসনের দ্বিতীয় দিন। তিন দিন এ অনশন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন সুজন বড়ুয়া।

সুজন বুড়য়া বলেন, সড়কে গাড়ি চালকরা প্রতিনিয়ত অপ্রয়োজনে হর্ন বাজান। আমি নিজেও এমন ঘটনায় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।তারপর মানুষকে বুঝিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছেনা দেখে নেমেছি আন্দোলনে। আসলে আমি একা কি-ই বা করতে পারি। তাই আমার এ প্রতিবাদ।

তিনি বলেন, হাই কোর্টের রায়ে হাইড্রলিক হর্ন নিষিদ্ধ করা হলেও তা বন্ধে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে এ সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। শব্দ দূষণ আমাদের কি ক্ষতি করছে আমরা তা বুঝতে না পারলেও দীর্ঘ মেয়াদি যে ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা অনুধাবন করতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনশন করব। এর মধ্যে সরকার শব্দদূষণ বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে পরবর্তীকালে আরও বড় কর্মসূচি পালন করব।

এইদিকে বাবার সাথে আন্দোলনে বসা চন্দ্রিমা বড়ুয়া বলেন,রাস্তায় চলাফেরা করার সময় গাড়ির অতিরিক্ত হর্ন সমস্যায় ফেলে। বাসায় গেলে শারীরিক ও মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় মাথাব্যথার কারণে পড়াশোনাও হয়না।আমি চাই সকলে সচেতন হোক,শব্দ দূষণ বন্ধ হোক।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে,আবাসিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল। মিশ্র এলাকায় (আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্য) এলাকায় তা ৬০ ডেসিবেল। আর শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল পর্যন্ত।

কিন্তু চট্টগ্রাম নগরীর কিছু কিছু এলাকায় এর মাত্রা ১২৫-১৩০ ডেসিবেলও অতিক্রম করে পেলে। যা মানুষের শারীরিক,মানসিক যেমন ক্ষতি ঘটায় তেমনি পশুপাখির জন্যও ক্ষতি ডেকে আনে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ নয়েজ কন্ট্রোল বলছে, পথের শব্দের কারণে একজনের হাইপার টেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশে থাকলে শিশুর জন্মগত ত্রুটির তৈরি হতে পারে। শব্দ দূষণের কারণে ব্লাড প্রেশার, শ্বাসের সমস্যা এমনকি হজমের সমস্যার তৈরি হতে পারে। তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।