১০৫ কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের ১১ মামলা

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যে ঘোষণায় বিদেশি সিগারেট আমদানির পর খালাস করে সরকারের ১০৫ কোটি ৭২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৩ টাকা রাজস্ব আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা করেছে দুদক। মামলায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সিএন্ডএফ এজেন্টসহ ১১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে কাস্টমস কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের চার কর্মকর্তা পৃথক পৃথক বাদী হয়ে ১১টি মামলা দায়ের করেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদক উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত।

দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, দুদক ঢাকা অফিস এসব মামলার প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে কমিশনের নির্দেশক্রমে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সাবেক ও বর্তমানে কর্মরত ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১১ জন আমদানিকারক ব্যবসায়ী, সিএন্ডএফ এজেন্টস প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন ও ৩ জন অনুপ্রবেশকারীকে।

তিনি আরও বলেন, পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে, প্রতারণা, জালিয়াতি ও অসদাচরণের মাধ্যমে উচ্চ শুল্কযুক্ত সিগারেট আমদানি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। যেটি দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, দুদক প্রধান কার্যালয়ের মানিল্ডারিং বিভাগের সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তার বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য চালানে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি করে তা খালাসপূর্বক সরকারের ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ১৮৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এ মামলায় আব্দুল গোফরান, হামীম গ্রুপের কম্পিউটার অপারেটর জহুরুল ইসলাম, কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আরেকটি মামলায় আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে রুটি মেকারের পরিবর্তে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি করে তা খালাসপূর্বক সরকারের ৮ কোটি ১৫ লাখ ৬ হাজার ১১২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলাতেও আসামি করা হয় ৯ জনকে।

এছাড়া, দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে ৩টি মামলা দায়ের করেছেন। এরমধ্যে প্রতিটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য চালানের মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি করে তা খালাসপূর্বক সরকারের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এরমধ্যে একটি মামলায় ৮ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ৯৭৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৯ জনকে আসামি করা হয়। অন্য মামলায় সরকারের ৮ কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৯ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে ৯ জনের বিরুদ্ধে। তৃতীয় মামলায় ২৪ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনকে আসামি করা হয়।

এছাড়া, দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ এর উপ-পরিচালক নারগিস সুলতানা বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া রেকর্ডপত্রাদি প্রস্তুত করে ব্যবহার করে সিনথেটিক ফ্রেবিকের পরিবর্তে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি করে তা খালাসপূর্বক সরকারের ৮ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। দ্বিতীয় মামলায় ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ১১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। তৃতীয় মামলায় আসামি করা হয় ১১ জনকে। এ মামলায় ৮ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৫২ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ এর সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। এরমধ্যে একটি মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানি ও খালাসপূর্বক সরকারের ৮ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩২ টাকা আত্মসাৎ করেছে। আরেকটি মামলায় ৮ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এতে ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। শেষ মামলায় ৮ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাতের মামলায় আসামি করা হয়েছে ৯ জনকে।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।