১ যুগ পর দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন

একদিকে উৎসাহ উদ্দীপনা অন্যদিকে পদ প্রত্যাশীদের তদবির

দীর্ঘ এক যুগ পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন। ২৮ মে এই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছে কেন্দ্র।

আর এ নিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। সরব হয়েছেন দীর্ঘদিন দলের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা নেতাকর্মীরাও। তবে জেলা কমিটিতে বিতর্কিত কেউ আসুন তা চাই না তৃণমূল পর্যায়ে নেতা কর্মীরা।

তারিখ ঘোষণার পর থেকে শীর্ষ পদ নিজেদের দখলে রাখতে নেতারা যে যার মতো তদবির করে যাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে এসে কেউ কেউ ঘুরছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে। আবার কেউ কেউ ধরণা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে।

দলটির কেন্দ্রীয় সূত্র জানায়, যোগ্যতায় যারা এগিয়ে থাকবেন তারা শীর্ষ পদ পাবেন। সেক্ষেত্রে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং দলের প্রতি নিবেদিতরাই পদে আসবেন। বিতর্কিতরা কোনোভাবেই যেন পদে আসতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

এদিকে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় একপ্রকার হতাশ হয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা। পদপ্রত্যাশীসহ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভও বিরাজ করছিল। তবে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে নতুনভাবে চাঙা হয়েছেন ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা।

প্রায় ১২ বছর আগে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির একাধিক সদস্য এখন যুবলীগে থাকতে চান না বলে জানা গেছে। তারা সবাই জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশী।

তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম ২০১০ সালের অক্টোবরে পটিয়া আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে সভাপতি ও সাতকানিয়ার পার্থ সারথি চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন।

এর মধ্যে সম্মেলন করে নিয়মিত কমিটি করার কথা বলা হলেও গত ১২ বছরেও কমিটি হয়নি।

২০১৩ সালের দিকে ওমর ফারুক যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আর নতুন কমিটি গঠন করতে পারেনি পুরাতন কমিটি বহাল রাখা হয়।

অন্যদিকে, গত ২৬ মার্চ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটির জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহী নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়। এতে সভাপতি পদের জন্য ১৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ৪২ জনের আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

এছাড়াও গত ১০ মে আওয়ামী যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যতীত অন্যান্য পদ-প্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়।

আগামী ১৪ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিয়েছেন কয়েকজন হত্যা মামলার আসামি। এরমধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন পটিয়ার দুইজন ও বোয়ালখালীর একজন চার্জশিটভুক্ত আসামি।

কেন্দ্রীয় যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় সভাপতি পদে ১৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৪২ জনের সিভি জমা পড়েছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সিভি জমা দেওয়া নেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন, সভাপতি পদে বর্তমান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি চৌধুরী, জেলা যুবলীগ নেতা এম এ রহিম, বোয়ালখালী পৌর মেয়র জহুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারুক, শফিউল আজম শেফু, আকতার হোসেন, এম এ রহিম, নাসির উদ্দীন মিন্টু, মাঈন উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন- মোহাম্মদ সোলাইমান, আবদুল হান্নান লিটন, নুরুল আমিন, কাজী মো. আলা উদ্দিন, ওসমান গনি, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মর্তুজা কামাল মুন্সি, মহিউদ্দিন মহি, মাহাবুবুল আলম, রাজু দাশ হীরু, জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ।

এদের মধ্যে আবার সাইফুল ইসলাম নামের একজন আছেন, যিনি কেন্দ্রের বিবেচনায় অযোগ্য ঘোষিত হন। কিন্তু তার জন্য বোয়ালখালীর সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদ সুপারিশ করলে সিভি জমা নেওয়া হয়।

তবে আবেদনকারীদের মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে কয়েকজন হত্যা মামলার আসামি। এরমধ্যে আছেন- জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আলোচিত আবদুল মালেক জনি হত্যা মামলার আসামি পটিয়া কুসুমপুরার আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও মহিউদ্দিন মহি এবং বোয়ালখালীর জাহেদুল ইসলাম ওরফে আবু জাহেদ।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন আবদুল মালেক জনি। এরপর টানা চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর পর জনির ছোট ভাই আবদুল মাজেদ চৌধুরী বাদি হয়ে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রধান আসামি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারুকসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে তাকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়। তবে এ মামলার প্রধান আসামি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে পুলিশ আটক করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। এছাড়া একই মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী পটিয়ার মহিউদ্দিন মহি ও বোয়ালখালীর জাহেদুল ইসলাম।

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাঈন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আজকের যুবলীগ সকল অনৈতিক ও অপরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবদমন করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে চলেছে। জেলা, উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অসংখ্য মামলায় গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে জীবনবাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমার অতীত ত্যাগ, শ্রম ও অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করবেন বলে আমি মনে করি।

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী যুবলীগ নেতা কাজী মো. আলাউদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগের একজন সাবেক দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে উপজেলা ও জেলায় আওয়ামী লীগের কঠিন দুঃসময়ে, জামায়াত-শিবির, বিএনপি ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে।

এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামের যুবসমাজকে সাথে নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ভিশন ৪১ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে চাই। যুবলীগ দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীরা আমার লড়াই সংগ্রামের ভূমিকাকে মূল্যায়ন করবেন।

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি চৌধুরী বলেন, সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও স্থান এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। সম্মেলনের জন্য কোনও সাব কমিটি করা হয়নি। বৃহস্পতিবার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভা রয়েছে। দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে ছিলাম। দলের সঙ্গে থাকার জন্য আমি এবার সভাপতি পদ প্রত্যাশী।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।