৩৪ মামলার আসামি, সাগরে নোঙর করা জাহাজ দেখিয়ে শতকোটি টাকার প্রতারণা!

বঙ্গোপসাগরে নোঙর করা জাহাজকে নিজের দাবী করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষ থেকে বিনিয়োগের নামে প্রায় শত কোটি হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়া মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। মেজবাহকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব কার্যালয়ে ভীড় জমিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় র‌্যাব চান্দগাঁও কোম্পানী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন র‌্যাব-০৭এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ। এসময় র‌্যাব হাটহাজারী কোম্পানী কমান্ডার ও পুলিশ সুপার তাহিয়াত আহমেদ চৌধুরী, র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী হাটহাজারীর কাটিরহাট এলাকার আবু তাহেরের ছেলে। র‌্যাবের ধারণা- প্রতারণার সাথে মেজবাহর পরিবারের সদস্যরা জড়িত। কারণ তার পিতার অন্য সন্তানরা বিলাসী জীবনযাপন করলেও দৃশ্যমান কোনো পেশায় নেই। মেজবাহর বিরুদ্ধে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩৪টি প্রতারণার মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে। ৩৪ জনকে সে চেক দিয়েছিল। এর বাইরে আছে তার ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা দেওয়া ভুক্তভোগীরা যারা ডকুমেন্টের অভাবে মামলা করতে পারেননি।

মেজবাহ গ্রেপ্তার হয়েছে এমন সংবাদে হাটহাজারী থেকে র‌্যাব কার্যালয়ে ছুটে আসেন মো. শাহজাহানের স্ত্রী। তিনি চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, তার স্বামী কাটিরহাট এলাকার ব্যবসায়ী। তিনি নিজের গাড়ি, দোকান, জমি বিক্রি করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিয়েছেন। তন্মেধ্যে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা মেজবাহ উদ্দিনের ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়েছেন। বাকী টাকা ক্যাশ দিয়েছেন।

বোয়ালখালীর মো. ওসমানকেও সাগরে নোঙর করা জাহাজ দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা নিয়েছিল বলে জানান তার ছেলে ইমতিয়াজ হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, সীতাকুণ্ড উপকূলে নোঙর করা জাহাজ দেখিয়ে প্রতারক মিজবাহ মানুষজন থেকে বিনিয়োগ নিতো। শিপের পাশাপাশি শিপ ইয়ার্ডও নিজের বলে দাবী করতো। এই ক্ষেত্রে মেজবাহ বেতন দিয়ে কিছু মানুষ রাখতো। কেউ তার অনুপস্থিতিতে যাচাই করতে গেলে সেই লোকজন বিনিয়োগকারীদের তথ্য দিতো নোঙর করা জাহাজের মালিক মেজবাহ।

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরৎ চাইলে কখনো জাহাজে স্বর্ণ আছে, কখনো ডায়মন্ড আছে বলে তথ্য দিতো। আর সেগুলো জাহাজ থেকে খালাস করতে পারলে তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। কোটি টাকা মেজবাহর কাছে কোনো বিষয়ই ছিল না। তিনি বিনিয়োগকারীদেরকে শতকোটি, হাজার কোটি টাকার স্বপ্ন দেখাতেন। এক্ষেত্রে সরকারের মন্ত্রী সভার পরিচিত মন্ত্রী মহোদয়দের সাথে তার ‘কথোপকথনের কল রেকর্ড শুনাতেন’ যা ছিল পুরোটাই প্রতারণা।

এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, ৩৪ মামলায় আমরা ৬৪ কোটি টাকার হিসাব পেয়েছি। শহরের একটা জমি ১২ জনের কাছে সে বিক্রি করার কথা বলে টাকা নিয়েছে। এদের কেউ মামলা করতে পারেনি। তেমনি যারা টাকার বিপরীতে চেক নিতে পারেনি তারা কোনো মামলা করতে পারেননি। সেই ভুক্তভোগীদের হিসাব যুক্ত করলে শতকোটি টাকার বেশী হবে।

মেজবাহ চট্টগ্রামের কোথাও দীর্ঘ সময় অবস্থান করতো না। একটা মোবাইল সিম বেশী দিন ব্যবহার করতো না। ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে বসবাস করতো। টাক মাথার মেজবাহ নিজের চেহারা পরিবর্তন করতে না পারলেও হেয়ার ট্রিটমেন্ট করে মাথায় চুল লাগিয়েছে। মুখে রেখেছে দাড়ি। টাকা দেওয়ার সময় তার মুখে যেমন ছিলনা দাড়ি তেমনি মাথায়ও ছিলনা চুল।

তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।