আনোয়ারায় ফসলি জমি ধ্বংস করে রমরমা মাটির ব্যবসা

চট্টগ্রামের আনোয়ারার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে অবাধে চলছে মাটি বিক্রির ব্যবসা। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না বাঁধসহ নদীর তীরবর্তী এলাকাও৷

জানা যায়, চক্রটি বরুমচড়া ইউনিয়নের কানুমাঝির হাট বেড়িবাঁধের রাস্তার পাশ থেকে মাটি কেটে ব্যবসা করছে। প্রতি ট্রাক মাটি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া রাস্তা ও নির্মাণাধীন বাড়ির প্রয়োজনেও অনেকে এই মাটি কিনে নেন। অবৈধভাবে জমির মালিকের কাছ থেকে প্রতি বিঘার মাটি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় কিনে কেটে নিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, একের পর এক অভিযানের পরেও থেমে নেই মাটি কাটার ব্যবসা৷ রাতের আঁধারে ফসলি জমি থেকে স্থানীয় চক্রটি মাটি কেটে ইটভাটা ও ভরাট কাজে বিক্রি করছে। তাদের সিন্ডিকেটে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যরা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে কৃষকদের নগদ টাকার প্রলোভন দেখার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কৃষককে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করার নামে মাটি নেওয়ার উদ্দেশ্য হাসিলেরও। তবে নগদ টাকা পেতে অনেক কৃষক স্বেচ্ছায় মাটি বিক্রি করছেন বলেও জানা গেছে। এভাবে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটায় জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।

গত রবিবার (৩ এপ্রিল) বিকালে উপজেলার বারশত ইউনিয়নের সিইউএফএল এলাকায় সরকারি খাস জমিতে অবৈধভাবে ভ্যাকু দিয়ে মাটি কাটার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কর্ণফুলী মইজ্জেরটেক এলাকায় মোহাম্মদ সুমন নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হাসান চৌধুরী।

এর আগে গত শনিবার উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এলাকা থেকে ফসলি জমিতে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে স্কাভেটর দিয়ে মাটি কাটার খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে পরৈকড়া, চাতরী ও বারখাইন ইউনিয়নের মো. আব্দুল মান্নান, মো. মাহবুবুল ইসলাম ও মো. জাবেদকে ৫০ হাজার টাকা করে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন।

উপজেলার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) দক্ষিণ পাশে তুলাতুলি মৌজায় প্রায় ১০০ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে সরকারি খাস জমি। এসব জমিতে রয়েছে প্রায় ১৫টির বেশি মাছের ঘের। এসব জমি দখলে নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট বর্ষা মৌসুমে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে আসছেন। আবার শীতের মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে ওই সিন্ডিকেট এসব জমিতে নামিয়ে দেয় স্কেভেটর। জমির মাটি (টপসয়েল) কেটে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে তারা কোটি টাকা। ওই স্থানে জনসমাগম না থাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত শতশত ট্রাক মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আনোয়ারাসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রতি ট্রাকে ১২০০ টাকায় স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করছে তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান হায়দার চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের ছয় থেকে আট ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। জমির উপরিভাগের জৈব উপাদান তৈরী হতে সময় লাগে ১০০ বছরের মতো। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলি জমির মাটি কাটা তাই বেআইনি। এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত উপজেলা প্রশাসনের।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটার দায়ে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে জরিমানাসহ জব্দ করা হয়েছে স্কাভেটরও। তিনি আরও বলেন, যারা সরকারি জমি দখলে রেখে মাটি কাটছেন এবং বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।