ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া আহমদের দাফন ইসলামী কায়দায়

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পূর্ব মায়ানী গ্রামের মনোরঞ্জন দাশ ও সন্ধ্যা রানী দাশের ছেলে রতন দাশ। ইসলামের সুমহান আদর্শে আকৃষ্ট রতন ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের জামেয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া লালখান বাজার মাদরাসায় মুফতি হারুন এজাহারের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
এরপর থেকে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন ও ইসলাম ধর্মের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতেন। গত ২৯ জানুয়ারি পটিয়ায় তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। তখন তাকে দাফন করতে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে বাধা আসে। বিষয়টি গড়ায় আদালতে।

প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি সময় হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা আহমদের লাশ সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে পটিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বিশ্বেস্বর সিংহ আহমদের লাশটি দাফনের নির্দেশ দেন।

নওমুসলিম আহমদের (২৯) লাশ সোমবার রাত ১১টার দিকে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক চট্টগ্রাম নগরীর চৈতন্যগলি কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হচ্ছে। জানাজা পড়িয়েছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিমের প্রতিনিধি ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদ্রিস।

আদালতে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট এনামুল হক জানান, নিহত নওমুসলিম আহমদের লাশ তার ধর্মীয় শিক্ষক আকরাম হোসেনের তত্ত্বাবধানে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক দাফন করার জন্য বিজ্ঞ আদালত রায় দিয়েছেন।

আহমদের সহপাঠী সিরাজুল মাওলা মিলাদ চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, আমাদের সহপাঠী আহমাদ আগে হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিলো। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদরাসায় মুফতি হারুন এজাহারের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার মৃত্যুর পর আমরা বন্ধুরা তার দাফনের ব্যবস্থা করলে তার পরিবার হিন্দু ধর্ম মতে সৎকারের দাবি করে। এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতের নির্দেশে রাতে জানাজা শেষে তার লাশ নগরীর চৈতন্য গলির কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আদালতের মাধ্যমে এফিডেভিড করে এবং কালেমা পড়ে স্ব-ইচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা আহমদ গত ২৯ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে পটিয়া উপজেলার মনসা বাদামতল এলাকায় তেলবাহী লরির চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যান।

পরিবার এবং বন্ধুদের লাশ দাফন এবং সৎকারের বিরোধ মৃত্যুর পরদিন ৩০ জানুয়ারি পটিয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে গড়ায়। আদালত ১৩ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৩ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি হাইওয়ে থানা পুলিশ। সেদিন তারা আবারও অধিকতর তদন্তের জন্য সময়ের আবেদন করে আদালতে একটি চিঠি দিয়েছিল পটিয়া হাইওয়ে পুলিশ।

পুলিশেল সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গত ২০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির নির্দেশ দেন। কিন্তু ২০ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ছিল সেদিন আদালত বন্ধ থাকায় সোমবার (২৪ এপ্রিল) উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আদালত দাফনের নির্দেশ দেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।