ঈদের আগেও বেতন পাচ্ছেন না কর্ণফুলীর ফয়জুলবারী মাদ্রাসার ২৪ শিক্ষক

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বেড়াজালে ঈদের আগেও বেতন ভাতা পাচ্ছেন না চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ফয়জুলবারী সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসায় নিয়োজিত ২৪ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত বেতন ভাতা না পাওয়ায় পুরো রমজানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষকরা।

মাদ্রাসা সূত্র জানায়, মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে গত পাঁচ মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে তাদের। সভাপতি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিলেও মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মনোনীত না হওয়ায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়। এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে মানবতার জীবন যাপন করছে এ প্রতিষ্ঠানটির ২৪ জন শিক্ষক কর্মচারী ও তাদের পরিবার।

পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারীতে মাদ্রাসার নতুন পরিচালনা কমিটির অভিভাবক, দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা ক্যাটাগরিতে সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নীতিমালা অনুযায়ী সভাপতি নির্বাচনের জন্য কমিটির প্রথম সভা আহ্বান করবে অধ্যক্ষ বা সদস্য সচিব। কিন্তু ফয়জুলবারী মাদ্রাসায় কমিটির প্রথম সভা ছাড়াই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এডিসি (সার্বিক), এডিসি (শিক্ষা) ও এডিসি (রাজস্ব) তিনজনের নাম সভাপতি মনোনয়নের জন্য ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয়ে প্রেরণ করে। যা কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও অবগত নয়। অপর দিকে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াছিনকে সভাপতি ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন চৌধুরীকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য করতে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি ডিও লেটার প্রেরণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তাদেরকে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারী সভাপতি ও বিদ্যুৎসাহী হিসেবে অনুমোদন দেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গত মার্চ মাসের শুরুতে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে। মাদ্রাসার মধ্যে অধ্যক্ষের গাফিলতির কারণে আটকে আছে শিক্ষকদের বেতন ভাতা। এছাড়াও ২০২১ সালে মাদ্রাসার আয়-ব্যায়ের হিসাব ব্যাংকের জমা না দেওয়া এবং ২০২২ সালে যাকাত ফিতরার টাকা এতিমখানার একাউন্টে জমা করার অভিযোগও তুলেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় অভিভাবক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, শিক্ষকরা বেতন না পাওয়ার প্রভাব আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার উপর পড়েছে। অধ্যক্ষের রেষারেষির কারণে গত পাঁচ মাস ধরে মাদ্রাসায় লেখাপড়া হচ্ছেনা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা।

মাদ্রাসার শিক্ষক লুৎফুর করিম বলেন, পুরো মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরিবেশটা নষ্ট হতে চলছে অধ্যক্ষের কারণে। বেতন বিলে সভাপতি কাছ থেকে স্বাক্ষর না নেওয়ায় শিক্ষক ও কর্মচারীরা বিপাকে পড়েছেন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মুঠোফোনে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আপনার সাথে বসে কথা বলব।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, এ মাদ্রাসার বিষয় নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। মাদ্রাসায় একজন সভাপতি নিয়োগ দিলেও এটা নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে র্দীঘদিন ধরে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ কারণে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।