ঋণখেলাপি মাকসুদ ও তার দুই সন্তানের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংক ম্যানেজারকে শোকজ

আরএসআরএম-এর মালিক মাকসুদুর রহমান ও তার দুই সন্তান মিজানুর রহমান এবং মারজানুর রহমানের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। একই সঙ্গে ট্রাস্ট ব্যাংক সিডিএ এভিনিউ শাখার ম্যানেজারকে যথাসময়ে মামলা দায়ের না করায় শোকজ করেছেন।

রোভবার (১৬ জুলাই) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মো. মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন বলে চট্টগ্রাম খবরকে নিশ্চিত করেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম শাহেদ।
তিনি বলেন, ‘বিবাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় আদালত আরএসআরএম’র মালিক মাকসুদুর রহমান, তার দুই সন্তান মিজানুর রহমান এবং মারজানুর রহমান এবং কোম্পানি পরিচালক আলা উদ্দিনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ট্রাস্ট ব্যাংক ১৮৮ কোটি টাকা ঋণখেলাপি মামলা দায়ের করতে দেরি হওয়ায় ব্যাংকের শাখা ম্যানেজারকে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, মাকসুদুর রহমান দেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি। তিনি ও তার আরএসআরএম গ্রুপের পরিচালকদের বিরুদ্ধে আদালতে ঋণ খেলাপির একাধিক মামলা রয়েছে। জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকসহ এক ডজন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা পায়।

এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের ৩১৩ কোটি টাকা ঋণখেলাপের অভিযোগে গত বছর ২৭ জানুয়ারি মাকসুদুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ ৩১২ কোটি ৮২ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৭ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে আদালতে মামলা করেছিল (মামলা নং ৫৩/১৮) জনতা ব্যাংকের লালদীঘি করপোরেট শাখা।
এতে আসামি করা হয় মাকসুদুর রহমানকে। আরএসআরএমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রতনপুর শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজের নামে ওই ঋণ নেওয়া হয়েছিল। মামলা দায়ের করার সাড়ে তিন বছর পর ঘটনাটি আদালতের নজরে এলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে সমন জারি নিশ্চিত করা হয়।

অন্যদিকে আরএসআরএমের কাছ থেকে খেলাপি ঋণের ২০১ কোটি টাকা আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তুলতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল সোনালী ব্যাংক। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ করা নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেসার্স রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসের কাছে সোনালী ব্যাংকের ২০১ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৫ টাকা পাওনা খেলাপি হয়েছে। এই পাওনার বিপরীতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় গ্রুপটির কারখানাসহ ১০০ শতক জমি বন্ধক নিলামে তোলা হবে।

একাধিক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রেক্ষিতে মাকসুদুর রহমানকে গতবছর ৮ জুন ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ বিষয়ে বলেছিলেন, আরএসআরএমের এমডি মাকসুদুর রহমান দেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি। অর্থ আত্মসাতের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতের দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এর মধ্যে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তাঁকে আটক করা হয়।

পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এ সময় পরোয়ানা থাকা একটি মামলাসহ চেক প্রতারণার আরও ছয় মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অন্যদিকে মাকসুদুর রহমানের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। শুনানী শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।

শুধু সোনালী কিংবা জনতা ব্যাংক নয়, খেলাপী ঋণের দায়ে ডজন খানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান করা মামলায় রতনপুর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাকসুদুর রহমান, চেয়ারম্যান শামসুন নাহার রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দুই ছেলে— মিজানুর রহমান ও মারজানুর রহমান, পরিচালক ইউনুস ভুঁইয়া এবং মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিনও আসামি।

১৯৭৩ সালে ইস্পাত ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেন মাকসুদুর রহমান। ব্যবসার পরিধি ধাপে ধাপে বাড়তে থাকলে ১৯৮৬ সালে এই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠা করেন রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, যা সংক্ষেপে আরএসআরএম নামেই বেশি পরিচিত। আরএসআরএম ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। আইপিওতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার ৩০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৪০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। ৪০ কোটি টাকা বকেয়া বিলের দায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।