ঋণখেলাপি মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও তার মায়ের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ব্যাংকের টাকা মেরে আত্মগোপনে আছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) নেতা-নেত্রী দম্পতি মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী সাবেক এমপি বেগম মাহজাবিন মোর্শেদ। বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরতে তাদের নামে রয়েছে একাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এবার মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিমের সাথে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো তার মা গুলমান আরা বেগমের নামেও। একই সঙ্গে মা-ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২১ জুন) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন। বিষয়টি চট্টগ্রাম খবরকে নিশ্চিত করেন অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ৩০ কোটি ৩৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৮ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেড ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করে। মামলার পর বিবাদীরা ৪ বছরে কোনো টাকা পরিশোধ করেননি। এছাড়া ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি ৩৩(১) ধারা অনুযায়ী নিলামে বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হলেও আগ্রহী ক্রেতার অভাবে নিলাম বিক্রয় সফল হয়নি। এমাতবস্থায় বিবাদী দুজনকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। একই সঙ্গে দুজনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুদ মওকুফ সুবিধা দিয়ে বিআরপিডি সার্কুলার ১৬ জারি করা হলেও বিবাদীরা ওই সার্কুলারের আওতায় কোনো ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়ে সুদ মওকুফের আবেদনও করেননি।

মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেসিক ব্যাংকের পাওনা প্রায় তিনশ কোটি টাকা। শুধু বেসিক ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎই নয়, মোর্শেদ মুরাদ নামে-বেনামে তার পারিবারিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৯৯০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। বিপুল অঙ্কের এই খেলাপি ঋণের দায় নিয়ে মোর্শেদ-মাহজাবিন দম্পতি পলাতক রয়েছেন।
আত্মসাৎ করা ঋণের টাকা কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে দুদকের মামলায় তাদের জামিন দেয় আদালত। কিন্তু শর্তানুযায়ী কিস্তি পরিশোধ না করা ও আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত তাদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। সেই থেকে তারা পলাতক।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী বেগম মাহজাবিন বর্তমানে জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। মোর্শেদ চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি। আর তার স্ত্রী মাহজাবিন মোর্শেদ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের (মহিলা আসন-৪৫) সাবেক সদস্য। মোর্শেদ মুরাদ সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকও ছিলেন।

বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় মোর্শেদ-মাহজাবিন দম্পতির বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক। এর মধ্যে একটি মামলায় মোর্শেদ মুরাদের মালিকানাধীন ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। অপর মামলায় বেসিক ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে ১৪১ কোটি ৫ লাখ ৪৫ হাজার ১০৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় মাহজাবিন মোর্শেদের বিরুদ্ধে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।