কমিউনিটি ক্লিনিকের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত কাপ্তাইয়ের আড়াছড়ির দেড়শ পরিবার

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৩ নম্বর চিৎমরম ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অতি দুর্গম পাড়া আড়াছড়ি। কাপ্তাই উপজেলা সদর হতে দুর্গম এই আড়াছড়ি পথ পাড়ি দিতে হয় প্রায় ১২ কিলোমিটার। তারমধ্যে নৌপথ এবং হাটা পথ ছাড়া ওই পাড়াতে পৌঁছানোর বিকল্প কোন মাধ্যম নেই। উঁচু নিচু পাহাড় বেষ্টিত এই আড়াছড়ি পাড়াতে মারমা, তনচংগ্যা, চাকমা এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫০টি পরিবার বসবাস করে। তবে দুঃখের বিষয় এই দুর্গম আড়াছড়ি পাড়াতে পরিবারগুলোর জন্য নেই কোন কমিউনিটি ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। পাড়াটির বাসিন্দারা দিনের পর দিন স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হয়ে আসছে।

সম্প্রতি আড়াছড়ি পাড়াটিতে গিয়ে কথা হয় আড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন তনচংগ্যার সাথে। তারা জানান, দুর্গম আমাদের এই গ্রামে স্বাস্থ্য সেবার জন্য নেই কোন সরকারি বেসরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক। আমরা সব রকমের স্বাস্থ্যসেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছি। তাই আমাদের গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী।

আড়াছড়ি এলাকার বাসিন্দা জীবন বিকাশ তনচংগ্যা ও চিচি মং মারমা বলেন, এলাকার কেউ যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে আমাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে পায়ে হেঁটে এবং ইঞ্জিনচালিত বোটযোগে কাপ্তাই নতুন বাজারে কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। আবার কেউ কেউ আরও ৮ কিলোমিটার সড়ক পথে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নেয়। যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য আমাদের গ্রামে কোন ক্লিনিক থাকতো তাহলে আমাদের এই কষ্টটা হতো না। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে রাস্তার অবস্থা এতই নাজুক থাকে যে, হেঁটেও যাওয়া সম্ভব হয়না।

চিৎমরম ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিশ্বজিৎ তনচংগ্যা এবং ৩৩৬ নম্বর আড়াছড়ি মৌজার ভারপ্রাপ্ত হেডম্যান চিকনধন তনচংগ্যা বলেন, কোন কারণে যদি কোন গর্ভবতী মহিলা বা বৃদ্ধ লোক হঠাৎ কোন অসুখে পড়ে যায় তাহলে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাদেরকে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে পারিনা। কারন উঁচু নীচু পাহাড় বেয়ে এইসব রোগীদের নেওয়া কষ্টসাধ্য। এই মুহূর্তে এই দুর্গম এলাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা অতীব জরুরী। যাতে এলাকাবাসী অত্যন্ত প্রাথমিক সেবাটুকু পাই।

চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী জানান, এই পাড়াতে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক অনেক বেশি প্রয়োজন। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাই।

এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন বলেন, এই এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য অবশ্যই কমিউনিটি ক্লিনিক জরুরী। তবে এলাকাবাসী যদি আবেদন করে তাহলে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে এই আবেদনটি পাঠাবো।

কাপ্তাই স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকার প্রতিটি এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করতে চায়। তবে এলাকার কেউ যদি ৮ শতাংশ জমি দেন, তাহলে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ঐ এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।