কর্ণফুলীতে প্রলয়ংকরী ঝড়ের ৩৩ বছরেও হয়নি বাঁধ!

প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ৩৩ বছর পার হয়ে গেলেও দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল আসলে উপকূলবাসীর স্বজন হারানো ও দুঃখ বেদনার ভয়াল দিনের কথায় এখনও শিউরে উঠেন অনেকেই।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ভয়াল এদিনে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার উপকূলীয় এলাকা ডাঙ্গারচরের ৫ শতাধিক মানুষ নিহত হন। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হাজারও মানুষের ঘরবাড়ি। ভয়াল দিনের ৩৩ বছর পরও দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় আতংকে রয়েছেন এ এলাকার প্রায় ২২ হাজার মানুষ।

অপরদিকে বড় উঠান, শিকলবাহা ও চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশে অরক্ষিত রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নতুন প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। অর্থ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কর্ণফুলীতে সাড়ে তিন হাজার মানুষ মারা যায়। জুলধা ইউনিয়নের ডাঙ্গারচর গ্রামে মারা যায় ৫ শতাধিক মানুষ, বিলীন হয়ে যায় হাজারও বাড়িঘর ও ফসলি ক্ষেত। সেই স্মৃতি এখনো ভুলেনি নিহতের স্বজনরা। বেড়িবাঁধ না থাকা, পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টারের অভাবে এ অঞ্চলে প্রাণহানির সংখ্যা বেশি ঘটেছিল বলে দাবি এলাকাবাসীর। ভয়াল দিনের ৩৩ বছরপরও দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও কর্ণফুলী নদীর পানির জোয়ারের পানিতে এই এলাকা প্লাবিত হয় প্রতিবছর।

২০১৬ সালে নবগঠিত এ উপজেলায় বর্তমানে সরকারি বেসরকারি কতটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে তার তথ্য পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ভবন গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। তবে বিদ্যমান জনসংখ্যা অনুযায়ী আরও ২০ থেকে ৩০টি সাইক্লোন সেল্টারের প্রয়োজন এ উপজেলায়।

উপকূলীয় ডাঙ্গারচরের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম হৃদয় (৪৫) বলেন, ‘৯১ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জুলধা-ডাঙ্গারচর এলাকার। বিগত সময়ে নদীর পাড় ভেঙে গ্রামের অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদী প্রায় আমাদের বাড়ির কাছে চলে আসছে। এখনো টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। গ্রামবাসীরা নিজেদের অর্থায়নে মাটি দিয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করলেও তা স্থায়ী নয়। বেঁড়িবাধ দিয়ে নদীর ভাঙন ঠেকানো না গেলে হয়তো একদিন আমাদের বাড়িঘরও বিলীন হয়ে যাবে।’

২০১৮ সালে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে জন্য ৫’শ ৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ আসলেও এখনো কর্ণফুলীর জুলধা ও শিকলবাহা ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে পারেনি। ৫ কিলোমিটারের অধিক এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ না হওয়ায় শঙ্কায় বসবাস করছেন উপকূলের হাজারও পরিবার।

কর্ণফুলীর শিকলবাহা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিকলবাহা ইউনিয়নের তিন কিলোমিটার অংশে কোন বেড়িবাঁধ নেই। প্রতি বর্ষার আগে মাটির বাঁধ দিলেও সেটা অনিয়মের কারণে কাজ সুষ্ঠ হয়নি। বর্ষার আগে নতুন বাঁধ না দিলে পুরো এলাকা তলিয়ে যাবে পানিতে। বিষয়টি মাননীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপিকে অবহিত করা হলে তিনি বাঁধ নির্মাণের সহযোগিতার আশ^াস দেন।’

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় উপ প্রকৌশলী মিজানুল হক জানান, ‘আনোয়ারা-কর্ণফুলীর জন্য নতুন করে বরাদ্দের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এবং অনুমোদিত প্রকল্পের টাকা পাওয়া গেলে কাজ শুরু হবে।’

কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘কর্ণফুলীর বড়উঠান, শিকলবাহা, জুলধা, চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খাল খনন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির প্রচেষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ১৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের টাকা না পাওয়ার কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এই প্রকল্পের অর্থ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।’

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।