গুমাই বিলে চলছে সোনালী আমন কাটার উৎসব

খুব ভোর। দু এক ফোঁটা কুয়াশা গাছের পত্র পল্লব বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে। চারদিক খানিকটা ধোঁয়াশা। এর মাঝে হেঁটে যাচ্ছেন একদল কৃষক। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় ব্যস্ততা। হেমন্তের সায়াহ্নে কুয়াশায় মোড়ানো বিস্তীর্ণ মাঠে ভিড় জমিয়েছেন কৃষকের দল। কেউবা পাকা দানের গোছায় পোঁচ দিচ্ছেন, আবার কেউবা ব্যস্ত আটি বেঁধে ধান বহনে। এ যেন এক মহোৎসব। বলছিলাম বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া গুমাই বিলে সোনালি আমন ধান ঘরে তোলার উৎসবের কথা।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) উপজেলার গুমাই বিলে দেখা গেছে কৃষকদের ব্যস্ততার চিত্র। আমনের এই মৌসুমে আশানুরূপ ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে দেখা গিয়েছে তৃপ্তির হাসি। ধানের বাজার দর নিয়েও কোন অভিযোগ নেই গুমাই বিলের কৃষকেরা।

সরজমিনে দেখা যায়, নতুন ধান ঘরে তুলতে আগাম জাতের আমনের পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া ভাল থাকায় পাকা ধান কেটে জমিতে শুকানো হচ্ছে। বসে নেই কৃষাণীরাও। তাদেন ব্যস্ততা ধান মাড়াই ও গোলায় উঠানো নিয়ে।

সদা হাস্যেজ্জ্বল কদমতলী ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষক আব্দুল মালেক জানান এই মৌসুমে কোন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অতিবৃষ্টি না হওয়ায় অনেকটাই ভালো হয়েছে ধানের ফলন। তবে আমন ধান লাগানোর শুরুতেই বৃষ্টি দেখা খুব কম আর অন্যদিকে লোডশেডিং, সাথে কারেন্ট পোকার আক্রমণে অনেকটাই চিন্তিত ছিলেন কৃষকরা। সব হতাশার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত আশানুরূপ ফলন পেয়ে দারুণ খুশি তিনি ।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে শেষ করেছেন মুনতাসীর রহমান। অবসর সময়ে তিনিও এসেছেন বাবার কাজে সাহায্য করতে। তিনি বলেন, কৃষি কাজের মধ্যে একটি আলাদা তৃপ্তি আছে, যদিও একাজ কষ্টসাধ্য। আমি বাবার সাথে ধান কাটতে এসেছি। ফলন দেখে ভালো লাগছে। তবে কৃষি উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যে বিষয়ে সরকারের আলাদা নজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার আমন আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। বিধান ৫১ জাতের নমুনা শস্য কর্তনে দেখা যায়, ২০ বর্গমিটার ১৬.২৮০ কেজি (কাঁচা) ফলন হয়েছে। যেখানে উপস্থিত আদ্রতা ১৬.৭ শতাংশ। ১২ শতাংশ আদ্রতার ফলম হেক্টর প্রতি ৭.৭০ মেট্রিক টন এবং ১৪ শতাংশ আদ্রতার ফলন ৭.৮৮ মেট্রিক টন। যেখানে গবেষণায় বলা হয়েছে ফলন ৪.৫-৫ মেট্রিক টন হবে, সেখানে আমরা ফলন পেয়েছি ৭.৮-৮ মেট্রিক টন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কারিমা আক্তার বলেন, শুরুতেই একটু হতাশায় ছিলেন কৃষকরা তবে ভালো ফলন হয়েছে আমন ধানের। ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষাবাদ করা হয়েছে। চিকন ধান ২৮-৩০ টাকা, মোটা ধান ২৬-২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। ভালো ফলন পাওয়ার আশায় কৃষকেরা।বিঘা প্রতি প্রায় ১৬-২০ মণ হারে ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।