চট্টগ্রামেও বিদেশফেরতদের পাশে থাকতে চায় ব্র্যাক, কাঠামো প্রস্তাব

প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। সেই প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়া যেমন নিরাপদ করতে হবে তেমনি তারা বিদেশ থেকে ফিরলেও তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। বিমানবন্দর থেকেই সেটি শুরু
করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলেই সেই কাজটি করতে হবে। এক্ষেত্রে একটি কাঠামো থাকা উচিত যাতে বিদেশফেরতরা প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।

বুধবার (৮ মে ) সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমন্বয় সভায় এসব কথা উঠে আসে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে ইমপ্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্ট্রিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২) প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের সম্মেলন
কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বিদেশফেরত মানুষদের সহায়তা করার জন্য আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড
অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরি করতে চাই। যেহেতু চট্টগ্রাম থেকে অনেক বেশি লোক বিদেশে যান তাই ফেরত আসার তালিকায়ও চট্টগ্রামের অনেক মানুষ আছেন। ঢাকার পাশাপাশি যেহেতু চট্টগ্রামেও অনেক ফ্লাইট আসে তাই
অনেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই ফেরত আসেন। এই মানুষদের সহায়তা করতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে একটা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের প্রয়োজন রয়েছে। সমন্বিতভাবে কাজ করলে
আরও বেশি মানুষকে সহায়তা করা যাবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের এসোসিয়েট ডিরেক্টর শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, অনেক মানুষ শূণ্য হাতে দেশে ফিরে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও বিদেশফেরতদের পাশে থাকতে চাই। এক্ষেত্রে একটি কাঠামো বা এসওপি থাকলে ভালো। আর ব্র্যাক শুধু যে
বিমানবন্দরে সহায়তা দিচ্ছে তা-ই নয়; বিদেশফেরতরা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারেন; আবার আয় করতে পারেন; ভালো থাকতে পারেন সেজন্য ব্র্যাক বিদেশ-ফেরত অভিবাসীদের পাশে দাঁড়ায়। প্রয়োজনে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের খসড়া প্রণয়নে সহায়তা করবে ব্র্যাক।

তিনি আরও বলেন, ব্র্যাক গত ছয় বছরে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিমানবন্দরে জরুরি সহায়তা দিয়েছে। যার মধ্যে চট্টগ্রামেই সেবা পেয়েছেন চার হাজার বিদেশ-ফেরত অভিবাসী। বিদেশ-ফেরতদের টেকসই পুনরেকত্রীকরণ নিশ্চিত করতে আমরা চট্টগ্রামে সেবার পরিধি
ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত করতে চাই।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শরিফুল বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কার্যক্রম বাস্তবায়নরত সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, ইমিগ্রেশন পুলিশ, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, এপিবিএন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরসহ কর্মরত সকল সংস্থা আমাদের জরুরি সহায়তা
কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রতিনিয়ত সহায়তা করে আসছে বলেই আমরা বিদেশফেরত অভিবাসীদের জরুরি সহায়তা প্রদান করতে পেরেছি। এই সহায়তা আরো বিস্তৃত করতে আমরা প্রত্যাশা-২ নামে একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছি। এই প্রকল্পে অন্তত ১০ হাজার মানুষ বিমানবন্দরে সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি সাত হাজার ৭০০ জন বিদেশ-ফেরত মানুষ যেন ফের দেশে আয় করতে পারেন সেজন্য তাদেরকে ধাপে ধাপে সহায়তা করা হবে।

একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশের যে অঞ্চলগুলো থেকে বেশি মানুষ বিদেশে যান তার মধ্যে চট্টগ্রাম অন্যতম। যে জেলাগুলোর প্রবাসী
আয় সবচেয়ে বেশি তার মধ্যেও আছে চট্টগ্রাম। তারপরও দেখা যায় যে, কোনো কোনো মানুষ অসফল হয়ে দেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই তার সহায়তার প্রয়োজন হয়। তাকে সেবাটা যেন আমরা সবাই সমন্বয় করে দিতে পারি
সেজন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একসাথে মিলে কাজ করতে হবে।

সরকারের পাশাপাশি অভিবাসী ও
বিদেশ-ফেরতদের নিয়ে কাজ করায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামকে ধন্যবাদ জানিয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

সভায় উপস্থিত বেসরকারি সংস্থা প্রত্যাশীর নির্বাহী পরিচালক মনোয়ারা বেগম বলেন, কোন খাতে প্রবাসী আয় খরচ করবেন তা নিয়ে ধারণা না থাকায় বিদেশের কষ্টার্জিত আয় ভুল খাতে খরচ করে ফেলেন অনেকে। রেমিট্যান্স
বিনিয়োগের বিষয়ে শুধু অভিবাসীদেরকেই না, তাদেরদের পরিবারকেও সচেতন করে তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য প্রদান করেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সেন্ট্রাল এয়ার ট্রাফিক অফিসার বাহালুল হায়াত বিপুল, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জিএসও-টু স্কোয়াড্রন লিডার তারিক আজিজ মৃধা,
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক সৈকত চৌধুরী, এপিবিএন-এর সহকারী পুলিশ সুপার আলী নেওয়াজ।

এছাড়া সমন্বয় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কার্যক্রম বাস্তবায়নরত সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, ইমিগ্রেশন পুলিশসহ সরকারি সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাবৃন্দ, বেসরকারি
সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক, ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ। সমন্বয় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন কর্মসূচির সিনিয়র ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন, মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিইন্ট্রিগ্রেশন সাপোর্ট সেন্টারসহ চট্টগ্রামে
কর্মরত ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রোগ্রামের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণ।

সভা শেষে চট্টগ্রামের গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে অভিবাসন ও গণমাধ্যম বিষয়ে একটি কর্মশালা আয়োজিত হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।